বৃক্ষরোপণই একমাত্র প্রতিহত করতে পারে জলবায়ু পরিবর্তনকে। এতদিন এমনটাই মনে করে এসেছেন গবেষকরা। এই তত্ত্বে ভুলও নেই এতটুকু। কার্বন-ডাই-অক্সাইডকে শোষণ করে তা খাদ্য কিংবা মাটিতে আবদ্ধ করে গাছ। বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘ল্যান্ড কার্বন সিঙ্ক’। ফলে, সার্বিকভাবে বায়ুমণ্ডলে কার্বনের পরিমাণ কমতে থাকে। এবার সাম্প্রতিক গবেষণা জানাল, জলবায়ু পরিবর্তন (Climate Change) এবং মানুষের কার্যকলাপের জন্য ক্রমে কার্বন শোষণের ক্ষমতা (Carbon Absorbing Ability) হারাচ্ছে গাছ।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিশ্বের প্রথম সারির বিজ্ঞান পত্রিকা ‘নেচার’-র প্রকাশিত একটি গবেষণা জানাচ্ছে, ক্রমবর্ধমান অস্থির পরিস্থিতির কারণে বায়ুমণ্ডলীয় কার্বন শোষণের ক্ষমতা হারাচ্ছে গাছ। মাটির হারাচ্ছে কার্বন ধরে রাখার ক্ষমতা। অর্থাৎ, বলতে গেলে গোটা ইকোসিস্টেম বা বাস্তুতন্ত্রের সমীকরণ বদলাতে শুরু করেছে ধীরে ধীরে। সাধারণত, মনুষ্যসৃষ্ট কার্বনের এক-তৃতীয়াংশ শোষণ করে গাছ ও মাটি। তবে কার্বন শোষণের হার কমতে থাকায়, পরবর্তীতে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে মানব সভ্যতাকে। প্রশ্ন থেকে যায়, এমন আশ্চর্য ঘটনার কারণ কী?
জলবায়ু গবেষক এবং সংশ্লিষ্ট গবেষণাপত্রের লেখক ডঃ প্যাট্রিক ম্যাকগুয়্যার জানাচ্ছেন, ক্রমশ বেড়ে চলেছে পৃথিবীর তাপমাত্রা। আর সেই কারণেই কার্বন শোষণ করার ক্ষমতা কমছে গাছেদের। অনিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে অভিযোজিত হয়ে উঠতে পারছে না গাছেরা। সঙ্গে বৃক্ষচ্ছেদনও এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। গাছ কাটার পর অনেকক্ষেত্রে মাটির উপরিতল ঢেকে ফেলা হয় কংক্রিটের চাদরে। কখনও আবার দীর্ঘদিন ফাঁকা পড়ে থাকে সংশ্লিষ্ট জমি। দুই ক্ষেত্রেই গাছের অনুপস্থিতি প্রভাবিত করে মাটিতে উপস্থিতি অণুজীবদের। নষ্ট হয়ে যায় অদৃশ্য একটি বাস্তুতন্ত্র। যার ফলে, ক্রমশ কার্বন শোষণ করার ক্ষমতা হারায় সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের মাটি। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের একাধিক অরণ্য বার বার দাবানলের শিকার হওয়ার কারণেও এই অণুজীবীয়-বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস হচ্ছে, এমনটাও উঠে আসছে গবেষণায়।
সবচেয়ে চিন্তার বিষয়, প্রকৃতির এই স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। ২২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এই গবেষণাপত্রে, উত্তর ও মধ্য আমেরিকা, ভূমধ্যসাগরীয় অববাহিকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসাবে চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা। বিশেষভাবে এই অঞ্চলগুলিতে বিগত চার দশকে সবচেয়ে বেশি হ্রাস পেয়েছে গাছেদের কার্বন শোষণের ক্ষমতা। অন্যদিকে আমাজন এবং উত্তর ইউরোপে কার্বন শোষণের মাত্রার ক্ষেত্রে সামান্য উন্নতি লক্ষ করেছেন গবেষকরা। ফলে সার্বিকভাবে বিশ্বের কার্বন শোষণের হার অপরিবর্তিত রয়েছে এখনও পর্যন্ত। তবে বিশেষ কিছু অঞ্চলে গাছের কার্বন শোষণের ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া, আগামীতে বড়ো বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে বলেই সতর্ক করছেন তাঁরা…
Powered by Froala Editor