লকডাউনে জীবিকার সন্ধান, কলেজের ইংরাজি শিক্ষক আজ নির্মাণ প্রকল্পের কুলি

দেশব্যাপী লকডাউনের ফলে কাজ হারিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। তাঁদের প্রত্যেকেই যে শ্রমিক, এমনটা নয়। অভাবের তাড়নায় বিকল্প জীবিকার সন্ধান করছেন অনেকেই। কোনো কাজই যে ছোট নয়, এই সত্যই যেন দারুন পরিহাসের সঙ্গে বুঝিয়ে দিচ্ছে সময়। আর এই নিষ্ঠুর সময়েও অবিচল থেকে জীবনসংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন যাঁরা, তাঁরা জানেন জীবন কত মূল্যবান। কেরালার একটি প্যারালাল কলেজের ইংরেজি ভাষার শিক্ষক পলেরিমীথা বাবু, লকডাউনের ফলে কাজ হারিয়েছেন তিনিও। আর এই পরিস্থিতিতে তাঁকে দেখা যাচ্ছে একটি নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে কুলির কাজ করছেন। ৫৫ বছর বয়সের পলেরিমীথা বাবু জানেন, এভাবেই লড়াই করে পেরিয়ে যেতে হয় দুঃসময়। এমন তো তাঁর জীবনে আগেও বহুবার ঘটেছে।

দশম শ্রেণীর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরেই দুর্ভাগ্যের ছায়া নেমে এসেছিল তাঁর জীবনে। সেইদিন থেকে তাঁর লড়াই শুরু অভাবের সঙ্গে। যখন কিশোর ছাত্রছাত্রীরা উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে, সেদিন তাঁকে খুঁজতে হয়েছিল রোজগারের সন্ধান। আর অবশেষে চেন্নাই শহরের কাছে একটি চায়ের দোকানে কাজ শুরু করেন তিনি। সেখানে চায়ের দোকানে খরিদ্দারদের জন্য রাখা থাকত ইংরেজি কাগজ। সেই কাগজ পড়তে পড়তেই তাঁর ইংরেজি ভাষা শিক্ষার শুরু। তারপর আবার ফিরে আসেন কেরালায়। কলেজ থেকে ইংরেজি ভাষায় অনার্স নিয়ে বিএ পাশ করেন তিনি। আর এই সময়েও তাঁর পড়াশুনো থেকে জীবন যাপনের যাবতীয় খরচ উপার্জন করতে হত নিজেকেই। তখন তিনি এক কন্ট্রাক্টরের অধীনে নির্মাণ কর্মীর কাজও করতেন।

তারপর প্রথাগত শিক্ষা শেষ করে একটি প্যারালাল কলেজে ইংরেজি ভাষার শিক্ষকতার সুযোগ পেলেন পলেরিমীথা বাবু। ১৮ বছর সেই কলেজেই শিক্ষকতা করেছেন। পরের ১২ বছর কেরালার আরও বেশ কয়েকটি প্যারালাল কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। প্রথম প্রথম অবশ্য আয় বেশ ভালোই ছিল। কিন্তু ক্রমশ প্যারালাল কলেজের পড়ুয়ার সংখ্যা কমতে থাকে। এর ফলে পলেরিমীথা বাবুর রোজগারও কমে যায়। ফলে লকডাউনের আগে তাঁর হাতে সঞ্চয় বলতে প্রায় কিছুই ছিল না।

এদিকে দুই পুত্র এবং স্ত্রীকে নিয়ে সংসার। দিনের শেষে উপার্জনের ব্যবস্থা তো তাঁকে করতেই হবে। এমন সময় এগিয়ে আসেন তাঁর এক বন্ধু পিটি শশী। তাঁর প্রস্তাবেই আবার কুলির কাজে ফিরে গেলেন পলেরিমীথা বাবু। তাঁর স্ত্রীও এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেননি। অবশ্য বয়সের ভারে এখন শরীর ভেঙে পড়েছে। তাছাড়া দীর্ঘদিনের অনভ্যাসের ফলে এখন আর আগের মতো পরিশ্রম করতে পারেন না। তবে এই পরিস্থিতিতে বন্ধু শশী তাঁর পাশে থেকেছেন। তাঁর সাহায্য ছাড়া পলেরিমীথা বাবুকে হয়তো অনাহারেই দিন কাটাতে হত। অবশ্য এর মধ্যেও প্রতি মুহূর্তে আছে করোনা সংক্রমণের ভয়। সেইসঙ্গে বয়স্ক শরীর আরও বেশি ভেঙে পড়ার সম্ভবনাও থেকে যায়। জীবনের লড়াইটা যে বড় কঠিন। এই মহামারী পরিস্থিতি যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে সেটাই।

Latest News See More