ব্রিটিশ কাউন্সিল কাজ ছেড়ে চায়ের দোকান, ব্যতিক্রমী উদ্যোগ দিল্লির তরুণীর

দিল্লি ক্যান্টনমেন্টের গোপীনাথ বাজারের ছোট্টো একটি চায়ের দোকান। স্থানীয় লোকজনদের কাছে যা পরিচিত ‘রেডি’ (Raydee) নামে। অবশ্য নামেই ‘দোকান’। মাথার ওপর ছাদ নেই কোনো। নেই চার দেওয়ালের গণ্ডিও। ফুটের ওপর টেবিল পেতেই চা বিক্রি করছেন এক তরুণী। ছোট্টো এই স্টলেই চা খেতে এসেছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ভারতীয় সেনা ব্রিগেডিয়ার সঞ্জয় খান্না। তবে আশ্চর্য এক দৃশ্য দেখে রীতিমতো চমকে ওঠেন তিনি। কী সেই দৃশ্য? 

শুধু স্থানীয়রাই নয়। দোকানে এসেছেন ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। দু-একজন বিদেশিও রয়েছেন ক্রেতার দলে। আর তাঁদের সঙ্গে স্পষ্ট ব্রিটিশ অ্যাকসেন্টের ইংরাজিতে কথা বলে চলেছেন তরুণী চা-বিক্রেতা। তাঁর বাচনভঙ্গিও দেখার মতোই। ব্যাপারটা দৃষ্টি কেড়েছিল ব্রিগেডিয়ার সাহেবের। ভিড় ফাঁকা হতেই গল্প জমিয়েছিলেন তিনি তরুণীর সঙ্গে। আর এবার তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ার সূত্র ধরেই প্রকাশ্যে এল এক আশ্চর্য কাহিনি। 

শর্মিষ্ঠা ঘোষ (Sharmistha Ghosh)। হ্যাঁ, ইনিই দিল্লির সেই চা-বিক্রেতা। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরাজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর ব্রিটিশ কাউন্সিল (British Council) লাইব্রেরিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। ইংরাজিতে দখল থাকার জন্য খুব একটা অসুবিধাও হত না তাতে। বেতনও মন্দ ছিল না। তবে সেই চাকরি ছেড়েই পথে নেমেছেন তিনি। খুলেছেন এই ছোট্ট চায়ের দোকান। কিন্তু এমন আশ্চর্য সিদ্ধান্তের কারণ কী? 

ব্রিগেডিয়ার খান্নার কথায়, ছোটো থেকেই ব্যবসার জগতে নামার স্বপ্ন ছিল শর্মিষ্ঠার। কখনও ফার্ম খোলার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করেছেন, কখনও আবার ভেবেছেন কোচিং ইনস্টিটিউটের কথা। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছিল ভারতের অন্যতম ‘টি পার্লার’ ‘চাওস’। ঠিক করেছিলেন, তিনিও গড়ে তুলবেন এমনই একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি। দিল্লি তো বটেই, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তৈরি করবেন নিজের স্টল। 

তবে চাইলেই তো আর সঙ্গে সঙ্গে একটা ব্যবসা দাঁড় করানো যায় না। তার জন্য প্রয়োজন অর্থের। বিনিয়োগের। না, তেমন বিনিয়োগকারী খুঁজে পাননি শর্মিষ্ঠা। তাই বছর দুয়েক ব্রিটিশ কাউন্সিল লাইব্রেরিতে কাজ করেই পুঁজি জমিয়েছেন তিনি। পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁর আর এক বান্ধবী ভাবনা রাও। তিনি কাজ করেন লুফটহংসে। কর্মসূত্রে বাইরে থাকার জন্য দোকান সামলাতে দেখা যায় না তাঁকে। তবে তিনিও এই ‘ফ্র্যাঞ্চাইজি’-র সহ-মালকিন। তাঁরও পরিকল্পনা রয়েছে, ব্যবসা দাঁড়ানোর পর চাকরি ছেড়ে চলে আসা দিল্লিতে। 

শর্মিষ্ঠার কথায়, ভারতের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ক্রমেই বেড়ে চলেছে হতাশা। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পছন্দের কাজ পাচ্ছেন না বহু তরুণ-তরুণী। অথচ, ভারতের এই বৃহৎ বাজারটাকে তাঁরা কাজে লাগাতে পারলেই বদলে যেতে পারে অর্থনৈতিক পরিকাঠামো। তাঁর কথায়, কোনো কাজই ছোটো নয়। শর্মিষ্ঠার এই আশ্চর্য উদ্যোগ কুর্নিশযোগ্য তো বটেই, অনুপ্রেরণাদায়কও নয় কি? 

Powered by Froala Editor