রাষ্ট্রের অত্যাচারে আত্মহত্যা করলেন টুরিং, ছয় দশক পেরিয়ে ‘প্রায়শ্চিত্ত’ ইংল্যান্ডের

একটা গোটা বিশ্বযুদ্ধ থামিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। রক্ষা পেয়েছিল অসংখ্য মানুষের প্রাণ। ধ্বংসের মুখ থেকে বেঁচে ফিরেছিল সভ্যতা। সেই মানুষটিকে সম্মান জানাতেই এবার জাতীয় নোটে তাঁর মুখ ছাপা হবে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট। হ্যাঁ, অ্যালান টুরিং। জার্মান বাহিনীর এনিগমা কোড ব্রেক করে মিত্র শক্তির জেতার রাস্তা পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন তিনি। অ্যালান টুরিং ইংল্যান্ডের ইতিহাসের অন্যতম রত্ন, এমনটাই জানিয়েছে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট।

প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি থেকে গণিত শাস্ত্রে গবেষণা শেষ করে নতুন আবিষ্কৃত কম্পিউটার নামক যন্ত্রটি নিয়ে কাজ শুরু করেন অ্যালান টুরিং। সেটা ১৯৩৬ সাল। নানা ধরণের নতুন নতুন মডেল দিতে থাকেন। এর মধ্যেই এসে পড়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। যুদ্ধে প্রথম থেকেই বিধ্বস্ত ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্স। জার্মান বাহিনী তখন প্রতিটা যুদ্ধে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু যে সাংকেতিক বার্তার মাধ্যমে সেই বিরাট বাহিনী যোগাযোগ বজায় রাখছে, সেই কোড ভেঙে ফেলতে পারলেই সমস্ত পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যাবে। এতদিন যে কাজ করত গুপ্তচররা, এবার সেই কাজে কম্পিউটারকে কাজে লাগানোর ভার এসে পড়ল টুরিং-এর কাঁধে।

শেষ পর্যন্ত সফল হলেন অ্যালান টুরিং। মূলত ‘আনব্রেকেবল’ নামে পরিচিত ‘এনিগমা’ কোডটি ভাঙার জন্যই বিখ্যাত তিনি। তবে এর আগেই তিনি ‘ইউ-বোট’ নামে আরেকটি জার্মান কোড ভেঙেছিলেন। এটির সাহায্যে সাবমেরিনগুলির মধ্যে যোগাযোগ রাখা হত। টুরিং-এর এই কাজের পর জার্মানির অনেক তথ্যই ইংল্যান্ডের হাতে এসে পড়ে। আজও সেইসব তথ্য ইংল্যান্ড গোপনীয়তার সঙ্গে রক্ষা করে চলেছে।

টুরিং-এর গবেষণা যে শুধু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতি ঘটিয়েছিল, তাই নয়। সেইসঙ্গে কম্পিউটার কোডিং এবং ডিকোডিং ব্যবস্থার ভিত তৈরি করে দিয়েছিল। তবে সেই মানুষটিকেও শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় অত্যাচারের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল। কারণ তিনি ছিলেন সমকামী। আর তৎকালীন ইংল্যান্ডে সমকাম ছিল আইনত অপরাধ। শেষ পর্যন্ত রাসায়নিকের সাহায্যে তাঁর জননাঙ্গ নষ্ট করে দেওয়া হয়। ক্ষোভে ও অপমানে আত্মহত্যা করেছিলেন অ্যালান টুরিং, ১৯৫৪ সালে। সেই অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করতেই এবছর ৫০ পাউন্ডের নোটে টুরিং-এর মুখ ছাপা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তার নকশাও তৈরি হয়ে গিয়েছে। সেখানে টুরিং-এর মুখের সঙ্গেই আছে তাঁর গবেষণাপত্র এবং এনিগমা কোডিং যন্ত্রের ছবিও।

আরও পড়ুন
জার্মান কোড সমাধান করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে চার বছর কমিয়ে দেন এই গণিতবিদ

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
৩০০ পুরুষের হত্যার পিছনে এক নারী, হাঙ্গেরির সুজানার সঙ্গে জড়িয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধও