একটা সময় মানুষ মাটির ওপর দিয়ে ঠেলে নিয়ে যেত যাবতীয় ভারের বোঝা। কখনও আবার ভার বহন করত কাঁধে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পূর্বপুরুষরা বুঝেছিল বস্তুর আকৃতির পরিবর্তন করলেই অনেকাংশ সহজ হয়ে যায় এই কাজ। যেমন গোলাকার বা বৃত্তাকার বস্তু সহজেই গড়িয়ে যেতে পারে মাটির ওপর দিয়ে। এভাবেই আবিষ্কৃত হয়েছিল চাকা। আর এই অতি সাধারণ ধারণাই বদলে দিয়েছিল সভ্যতার ইতিহাসকে। এনে দিয়েছিল গতি। কিন্তু চাকার আকার গোল না হয়ে যদি চৌকো (Square Wheel) হত?
পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন গবেষকরা। প্রযুক্তিবিদরা বানিয়েছেন চৌকো চাকার যান। তবে ঢেউ খেলানো তলে চলতে সক্ষম হলেও, সমতল রাস্তায় সম্পূর্ণভাবেই অচল এইসব গাড়ি। সেটাই তো হওয়া স্বাভাবিক। চৌকো কোনো বস্তুকে ঢেলে এগিয়ে নিয়ে যেতে যে প্রয়োজন পড়ে কয়েকগুণ বেশি বলের। আর তার নেপথ্যে রয়েছে ঘর্ষণ বলের প্রভাব। তবে পদার্থবিদ্যার সমস্ত সূত্র ও সাধারণ জ্ঞানকে যেন এক নিমেষে নস্যাৎ করে দিল নতুন আবিষ্কার।
আদর্শ বর্গাকৃতি দুটি চাকার ওপর বসানো সাইকেলের (Cycle) ফ্রেম। আর সেই সাইকেলে চেপেই দিব্যি মসৃণভাবে সমতল পথে এগিয়ে চলেছেন এক সওয়ারি। এতটুকু বাড়তি বল প্রয়োগ করতে হচ্ছে না তাঁকে। সম্প্রতি এমনই এক আশ্চর্য দৃশ্য সাড়া ফেলে দিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। এও কি সম্ভব? নাকি আধ মিনিটের ছোট্ট এই ভিডিও ক্লিপটি গোটাটাই তৈরি হয়েছে কম্পিউটারে, কোনো ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যারের মাধ্যমে?
না, এডিট কিংবা ডিজিটাল গ্রাফিক্স নয়। বাস্তবেই এই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন ইউক্রেনিয়ান প্রযুক্তিবিদ সার্গেই গর্ডিয়েভ (Sergii Gordieiev)। নিত্যনতুন ঘরোয়া প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য রীতিমতো খ্যাতি রয়েছে সার্গেই-এর। এ-বিষয়ে ‘দ্য কিউ’ নামে তাঁর একটি চ্যানেলও রয়েছে ইউটিউবে। নিজের উদ্ভাবন করা প্রযুক্তির ব্যবহারিক প্রয়োগের ভিডিও সেখানে আপলোড করেন তিনি। সম্প্রতি সেখানেই প্রকাশ্যে এসেছে এই ভিডিওটি। কিন্তু কীভাবে এই সাইকেল তৈরি করলেন তিনি?
আসলে প্রচলিত বৃত্তাকার চাকার মতো, একই পদ্ধতিতে কাজ করে সার্গেই-এর তৈরি এই চাকা। খুলে বলা যাক ব্যাপারটা। সার্গেই-এর তৈরি চাকার বাহ্যিক গঠন বর্গাকার হলেও, ঘোরে না সম্পূর্ণ চাকাটি। বরং, চাকার মূল চৌকো ফ্রেমটি স্থির থাকে। এ ফ্রেমের চারদিকে, টায়ারের নিচে সংযুক্ত হয়েছে একাধিক ছোটো ছোটো ধাতব গোলক এবং চোঙ। সাইকেলের প্যাডেলে চাপ দিলে ঘুরতে শুরু করে সেগুলি। আর তাতেই ঘূর্ণন তৈরি হয় টায়ারে। গতিময় হয়ে ওঠে সাইকেল। আধুনিক ট্যাঙ্কে যেমন চাকার বদলে মাটির সংস্পর্শে থাকে লোহার চেন, এক্ষেত্রেও ব্যাপারটা তেমনই। অতিপরিচিত এই প্রযুক্তির সাহায্যেই যে চৌকো চাকার রহস্যভেদ করা সম্ভব— সার্গেই ছাড়া তা এতদিন ভেবে উঠতে পারেনি কেউ-ই। আর সেই কারণেই হয়তো সার্গেই-কে কুর্নিশ জানাতে পিছপা হননি বিশ্বের তাবড় পদার্থবিদরাও…
Powered by Froala Editor