কাছিম সংরক্ষণে জিপিএস ট্র্যাকিং, অভিনব উদ্যোগ হুগলি নদীতে

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের কাজে দীর্ঘদিন ধরেই জিপিএস চিপ (GPS Tracking) ব্যবহার করা হয়ে আসছে। আর এবার সেই পদ্ধতিকে কাজে লাগানো শুরু হল জলজ প্রাণী সংরক্ষণের কাজেও। হুগলি নদীর মোহনায় বিরল প্রজাতির কাছিম সংরক্ষণে এবার ব্যবহার করা হবে এই পদ্ধতি। আজ সকালে সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভের পক্ষ থেকে এমনই ১০টি কাছিমকে ছাড়া হল নদীতে। কাছিম সংরক্ষণের পাশাপাশি তার চরিত্র সম্বন্ধেও নতুন নতুন তথ্য আবিষ্কারের উদ্দেশ্য মাথায় রেখেই নেওয়া হয়েছে এই উদ্যোগ।

বাটাগুর বাসকা (Batagur Baska) বা নর্দার্ন রিভার টেরাপিন ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন কাছিম প্রজাতিগুলির একটি। একসময় বাংলা ও ওড়িশার ম্যানগ্রোভ অরণ্য থেকে শুরু করে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া পর্যন্ত দেখা মিলত এই প্রজাতির। কিন্তু সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তন এবং জলজ প্রাণী শিকারের বাড়বাড়ন্তের কারণে আজ তাদের অস্তিত্ব লোপ পেতে বসেছে। ওড়িশার ম্যানগ্রোভ অরণ্যে আর একটিও বি বাসকার অস্তিত্ব নেই বলে মনে করছেন গবেষকরা। পশ্চিমবঙ্গে সুন্দরবন অঞ্চলে কিছু প্রাণীর অস্তিত্ব থাকলেও তাদের অবস্থান বোঝা বেশ কঠিন। এই সমস্ত কারণে ভারতের সংরক্ষিত প্রাণীর তালিকার প্রথম তফশিলেই জায়গা পেয়েছে বি বাসকা।

এর মধ্যেই ২০০৮ সালে টার্টল সারভাইভাল অ্যালায়েন্স ইন্ডিয়া প্রোগ্রাম এবং সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভের গবেষকদের মিলিত সমীক্ষায় জানা যায় সজনেখালি অঞ্চলের একটি পুকুরে ১২টি বি বাসকা ঢুকে পড়েছে। যদিও এদের বাসস্থান নদীতেই। পুকুরের পরিবেশে তাদের বাঁচিয়ে রাখা ছিল বেশ কঠিন। কিন্তু উপযুক্ত সুরক্ষের ব্যবস্থা না করে তাদের নদীতে ফিরিয়ে দিতেও চাননি গবেষকরা। সেই থেকেই সজনেখালিতে সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভের তত্ত্বাবধানে শুরু হয় সংরক্ষণ। দেখতে দেখতে কাছিমের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। এখন ৩৮৯টি কাছিম তাঁদের তত্ত্বাবধানে রয়েছে বলে জানিয়েছেন সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভের আধিকারিকরা। এর মধ্যে থেকেই ১০টি কাছিমকে নদীতে ছাড়া হল। তার মধ্যে ৭টি পুরুষ এবং ৩টি মহিলা কাছিম রয়েছে। নদীর পরিবেশ কাছিমরা ঠিক কোথায় থাকছে, কোথায় নিরাপদ বোধ করছে – এই সমস্ত তথ্য জানতেই তাদের শরীরে জিপিএস ট্র্যাকিং চিপ পরিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্যাটেলাইটের সাহায্যে নজরে রাখা যাবে তাদের গতিবিধি। পাশাপাশি কখনও কোনো কাছিম বিপন্ন পরিবেশের শিকার হলেও তৎক্ষণাত উদ্ধার করা যাবে তাকে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ভবিষ্যতে জলজ প্রাণী সংরক্ষণ এবং গবেষণায় নতুন দিগন্ত খুলে যেতে পারে।

Powered by Froala Editor

More From Author See More