এককালে নদী দিয়ে জল বইত ভালোই। জল এখনও বয়, তবে নদীর চেহারা ধীরে ধীরে নোংরা নালায় রূপান্তরিত হচ্ছে। এমনই অবস্থা আসানসোল শিল্পাঞ্চলের গাড়ুই আর নুনিয়া নদীর। নদীর সেই পরিসর আর নেই। বদলে তার বুকে পড়ে আছে কংক্রিটের জিনিস, আবর্জনা, বর্জ্য। আর পাঁচটা বড় নিকাশি নালার সঙ্গে যার কোনো পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যাবে না।
কিন্তু এককালে এমন অবস্থা ছিল না। ভরা বর্ষায় গাড়ুই আর নুনিয়ার রূপ দেখলে কেউই বলবে না এখনকার এই শীর্ণ অবস্থার কথা। খুব সম্প্রতি এমনটা ঘটেনি, দীর্ঘদিন ধরে অযত্নের ফলে আজ এমন দশা। আশেপাশের কারখানাগুলো যথেচ্ছভাবে এই জল ব্যবহার করে। সেই কারখানা থেকেই আবার বর্জ্য এসে এখানে জমা হচ্ছে। নাব্যতা তো কমেছেই, তার ওপর নদীর জলও কালো হয়ে যাচ্ছে।
শুধু এতেই শেষ নয়। এক সময়ের নদী যতটা বিস্তৃত ছিল, আজ সেটা অনেক কমে এসেছে। কারণ, অবৈধ নির্মাণ। নদীর দুই পাড় আস্তে আস্তে বুজিয়ে তৈরি হয়েছে বাড়ি, কারখানা। ফলে, নদীর চেহারা নালায় পরিণত হয়েছে। এলাকাবাসীদের অভিযোগ, নদীর ওপর যে সেতু তৈরি হয়েছে সেখানেও গত কয়েক বছর ড্রেজিং হয়নি। ফলে, সব দিক থেকেই অবস্থা শোচনীয়। স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও, আজ অবধি সেই উদ্যোগের দেখা পাওয়া যায়নি বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়রা।
শুধু গাড়ুই বা নুনিয়া নদী নয়, গোটা ভারতের দিকে তাকালে অনেক নদীরই এমন ছবি দেখতে পাব। নদীকে অনেকেই দেবতাজ্ঞান করেন। আর সেই নদীকে দূষিত করতে এক মুহূর্তও ভাবেন না তাঁরা। গঙ্গার অবস্থাই দিনকে দিন খারাপ হচ্ছে। অনেক নদীর অস্তিত্বই মুছে গেছে। শুধু বাংলা নয়, ভারতেও নদী বাঁচাও আন্দোলন শুরু হয়েছে। সচেতনতাও বেড়েছে। কিন্তু অবস্থার কতটা উন্নতি হয়েছে? গাড়ুই, নুনিয়ার মতো অনেক নদীরই আজ এরকম করুণ অবস্থা। আমরা কতটা সচেষ্ট হচ্ছি? প্রশাসনের ভূমিকা কোনোমতেই অস্বীকার করা যায় না। সঠিক ব্যবস্থা ও কড়া আইনী পদক্ষেপ নিলে হয়ত ছবিটা বদলাত।