গতবছর অক্টোবর মাসের কথা। ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে টুইটারকে (Twitter) ঝুলিতে পুরেছিলেন ধনকুবের ইলন মাস্ক (Elon Musk)। তবে তারপর থেকেই আশ্চর্য সব পদক্ষেপের কারণে একের পর এক বিতর্কে জড়িয়ে চলেছেন তিনি। ব্লু-টিক বিক্রি করা থেকে কর্মীছাঁটাই— বার বার চর্চিত হয়েছে তাঁর কার্যকলাপ। এবার ফের এক আশ্চর্য পদক্ষেপ নিলেন মাস্ক। টাকার বিনিময়েই ‘ইউজারনেম’ অর্থাৎ টুইটার হ্যান্ডেলের নাম বিক্রির সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি।
প্রশ্ন ওঠে, পছন্দসই ‘ইউজারনেম’ (Username) পাওয়ার জন্য ব্যবহারকারীদের মধ্যে সত্যিই কি কোনো মাদকতা রয়েছে? না, তেমন কোনো স্পষ্ট তথ্য বা গবেষণা প্রকাশ্যে আসেনি এখনও। ভাবছেন, তাহলে হঠাৎ কেন এমন ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নিলেন মাস্ক? আসলে ব্যবহারকারীদের কথা ভেবে এই নতুন পরিষেবা চালু করছে না টুইটার। বরং, সদ্য-কেনা এই সংস্থাটি চালাতেই নাভিশ্বাস উঠছে মাস্কের। তাই অর্থভাণ্ডার ভরতেই এই পথে হাঁটছেন তিনি।
প্রযুক্তি বিশ্লেষক ক্যাসি নিউটন জানাচ্ছেন, সম্প্রতি টুইটারের কোম্পানি বিল্ডিং ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন কয়েক হাজার কর্মী। তার কারণ আর কিছুই নয়, অফিস ভাড়া দেওয়ার জন্য অর্থ প্রদান করতে পারছে না এই সংস্থা। পাশাপাশি কর্মীদের সামগ্রিক বেতন বাজেটের সীমা পেরিয়ে যাওয়ায় নতুন করে কর্মীছাঁটাই-এর কথাও ভাবছেন মাস্ক।
শুনে খানিকটা আশ্চর্য হতে হয় বৈকি। কর্মীদের বেতন কিংবা অফিস ভাড়া দেওয়ার মতোও অর্থ নেই বিশ্বের অন্যতম ধনকুবেরের? না, ক্ষমতা নেই তেমনটা নয়। তবে টুইটার যেন সাদা হাতি হয়ে উঠেছে মাস্কের কাছে। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি— মাত্র আড়াই মাসের ব্যবধানেই এখনও পর্যন্ত ২০ হাজার কোটি ডলার সম্পত্তি খুইয়েছেন মাস্ক। যা তাঁর করা বিশ্বরেকর্ড। এমনকি রেকর্ড অঙ্কের ক্ষতির কারণে গিনেস বুকের পাতাতেও নাম তুলেছেন তিনি। বিশ্ব ইতিহাসে এত স্বল্প সময়ে এত সম্পত্তি হারানোর নজির নেই আর কোনো মানুষের।
পরিসংখ্যান বলছে ২০২২-এর শুরুতে মাস্কের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৩১ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। বর্তমানে তা এসে ঠেকেছেন মাত্র ১৩ হাজার ৭০০ কোটিতে। তবে এখানেই শেষ নয়। বর্তমানে বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তির জায়গাও হারিয়েছেন টেসলার সিইও। তাঁকে ছাপিয়ে এখন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি বার্নার্ড আর্নো।
অবশ্য এই পুরো ক্ষতির জন্য টুইটার একা দায়ী নয়। বাণিজ্যজগতে বড়োসড়ো ধাক্কা খেয়েছে টেসলা-ও। টেসলার স্টক নিচে নেমে যেতেই বিপুল অঙ্কের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় ইলন মাস্ককে। বিশেষজ্ঞদের মতে মাস্কের অন্যতম উপার্জনের পথ টেসলাই। অন্যদিকে টুইটার ছিল তাঁর ‘স্ট্র্যাটেজিক হোল্ড’। তবে প্রধান ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়ায়, ধীরে ধীরে করুণ হয়ে উঠছে টুইটারের হালও। যেন-তেন-প্রকারেণ এই সংস্থাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যই তাই ইউজারনেম বিক্রির সিদ্ধান্ত মাস্কের। আর এই নিলামের জন্য মুছে ফেলা হয় প্রায় ১৪ কোটি অ্যাকাউন্টের ইউজারনেম। যে-সকল অ্যাকাউন্টভগুলি ব্যবহৃত হচ্ছে না দীর্ঘদিন ধরে, সেগুলিকেই মুছে ফেলে সেই ইউজারনেম তোলা হবে নিলামে। অবশ্য মাস্কের এই পদক্ষেপ আবারও বড়ো কোনো জগাখিচুড়ি বাঁধিয়ে বসতে পারে বলেই মনে করছেন বহু বিশেষজ্ঞ…
Powered by Froala Editor