রেকর্ড সময়ে ম্যারাথন-জয়, শেষ দিনেও বিস্ময়ের সাক্ষী অলিম্পিক

শুরু থেকেই বারবার বিস্মিত করেছে এবারের অলিম্পিক। কখনও স্বর্ণপদক ভাগ করে নিতে দেখা গেছে দুই প্রতিদ্বন্দ্বীকে; আবার কখনও কোনো অ্যাথলিটের অপ্রত্যাশিত জয় নজর কেড়েছে বিশ্ববাসীর। অলিম্পিকের শেষ লগ্নেও বজায় থাকল সেই নাটকীয়তার ধারাবাহিকতা। গতকাল ছিল অলিম্পিকের শেষ ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড ইভেন্ট ম্যারাথন। আর সেখানেই এক নতুন ইতিহাস লিখে ফেললেন কেনিয়ার অ্যাথলিট ইলিউড কিপচোগে। অলিম্পিকে নিজের রেকর্ড ভাঙলেন তো বটেই, পাশাপাশি তৈরি করলেন নতুন অলিম্পিক রেকর্ড।

৩৭ বছর বয়সী কিপচোগে এদিন ম্যারাথন শেষ করতে সময় নিলেন মাত্র ২ ঘণ্টা ৮ মিনিট ৩৮ সেকেন্ড। এতটুকু সময়ে প্রায় ৪২ কিলোমিটার পথ অতিক্রম এক কথায় দুঃস্বপ্নে ভাবাও বোধ হয় অসম্ভব। এর আগে ২০১৬-র রিও অলিম্পিকেও স্বর্ণপদক জয় করেছিলেন তিনি। সেবার ২ ঘণ্টা ৩৮ মিনিট ৫২ সেকেন্ড সময় নিয়েছিলেন কিপচোগে। এবার তার থেকেও কম সময়েই তিনি ছুঁয়ে ফেললেন ফিনিশিং লাইন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন আরও তারুণ্যের দিকেই হাঁটছেন ৩৭ বছর বয়সী কেনিয়ান রানার। 

দ্বিতীয় স্থানাধিকারী ম্যারাথন রানারের সঙ্গে এদিন তাঁর ব্যবধান ছিল প্রায় দেড় মিনিটের। কিপচোগের এই কীর্তিতে স্পষ্ট বিস্ময় ধরা পড়েছিল ধারাভাষ্যকরদের কণ্ঠেও। অলিম্পিক কেবিন থেকে ভেসে এসেছিল সেই বিস্ময়ের সুর, ‘বাকি প্রতিযোগীদের অবস্থান দেখতে গেলেও দূরবীন প্রয়োজন কিপচোগের।’

১৯৮৪ সালে কেনিয়ার ক্যাপসিসিওয়াতে জন্ম কিপচোগের। বাবাকে দেখা কেবলমাত্র ছবিতেই। একক মায়ের কাছেই মানুষ হয়েছেন কেনিয়ার বিস্ময় মানব। চরম আর্থিক অনটনের মধ্যেই বেড়ে ওঠা। স্কুলে যাতায়াতের গাড়ি ভাড়া বাঁচাতে দৌড়েই পাড়ি দিতেন প্রায় তিন মাইল পথ। তখনও পর্যন্ত অ্যাথলেটিক্সের ব্যাপারে ন্যূনতম অবগত ছিলেন না তিনি। পরবর্তীতে বিভিন্ন দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া কেবলমাত্র অর্থ পুরস্কারের আশায়।

আরও পড়ুন
চতুর্থ স্থানের ‘ফাঁড়া’— একটুর জন্য অলিম্পিকে পদক পাননি যেসব ভারতীয়

সেই দৌড়টাই শেষ হয়েছিল অলিম্পিকে এসে। ২০০৪-এ এথেন্স এবং ২০০৮ সালে বেজিং অলিম্পিকে ৫০০০ মিটার দৌড়ে যথাক্রমে ব্রোঞ্জ এবং রুপোর পদক ছিনিয়ে নিয়েছিলেন কিপচোগে। তারপর প্রত্যাবর্তন ম্যারাথনম্যান হিসাবে। চূড়ান্ত সাফল্য এল সেখানেই। পর পর দুটি অলিম্পিকে সোনা। সেইসঙ্গে অলিম্পিক রেকর্ড। এক কথায় অত্যাশ্চর্যকর বিষয়ই বটে। 

আরও পড়ুন
শুধু খেলাই নয়, বারবার রাজনৈতিক প্রতিবাদের মঞ্চও হয়ে উঠেছে অলিম্পিক

তবে ম্যারাথনে কিপচোগের ব্যক্তিগত রেকর্ড আরওই বিস্ময়কর। ২০১৯ সালে ভিয়েনায় ইনিওস চ্যালেঞ্জে তিনি ম্যারাথন শেষ করেছিলেন মাত্র ১ ঘণ্টা ৫৯ মিনিট ৪০ সেকেন্ডে। যা ম্যারাথনের ইতিহাসে বিশ্বরেকর্ডও বটে। ২০১৩ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ম্যারাথনে একাই দাপটের সঙ্গে ধরে রেখেছিলেন প্রথম স্থান। তবে ২০২০-র ম্যারাথনে প্রথম তিন থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন তিনি। এবার অলিম্পিকে আবারও স্বপ্নের প্রত্যাবর্তন। সেইসঙ্গে আবেদে বিকালা ও ওয়ালদেমারের সঙ্গে একাধিক অলিম্পিক ম্যারাথনজয়ীর তালিকাতেও নাম লিখিয়েও এক নতুন ইতিহাস তৈরি করলেন কিপচোগে। প্রমাণ করে দিলেন সর্বকালের সেরা ম্যারথন রানার এখনও তিনিই…

আরও পড়ুন
এ যেন অঘটনেরও অঘটন, প্রথমবার অলিম্পিক সেমিফাইনালে ভারতের মহিলা হকি দল

Powered by Froala Editor