সকালবেলায় এক কাপ গরম চা না হলে আমাদের অনেকের মেজাজটা ভালো যায় না। কিন্তু এই চায়ের জন্যই বিপদে পড়ছে হাতিরা। ভারতের চায়ের বাগানগুলোয় গর্তে পড়ে মারা যাচ্ছে এশিয়ান হাতি। এমনই একটি রিপোর্টে উদ্বেগ বেড়েছে পরিবেশবিদদের।
চিনের পরেই পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি চা উৎপাদন হয় ভারতে। দেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে, পাহাড়ের ঢাল বরাবর দেখা যায় প্রচুর চা বাগান। সেই দৃশ্যের সঙ্গে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। চা গাছের জন্য ঢালু জমি সবচেয়ে উপযুক্ত। গাছের গোড়ায় জল জমলে সেটা চা চাষের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই জমি তো ঢালু রাখা হয়ই, সেই সঙ্গে বাগানের কর্মীরা বিভিন্ন ট্রেঞ্চ বা খালের মতো কেটে রাখে বাগানে। জল জমার ন্যুনতম সম্ভাবনাও যাতে না থাকে।
এই খালগুলিই বিপদ সৃষ্টি করছে হাতিদের। হাতিরা চা খেতেও জানে না, চা চাষের নিয়মও জানে না। এই পাহাড়ি এলাকাগুলিই তাদের চলাচলের জায়গা। সেখানেই বিপদ সৃষ্টি করেছে এই ট্রেঞ্চগুলো। বুঝতে না পেরে এখানে পড়ে যাচ্ছে হাতিরা। কাউকে উদ্ধার করা যাচ্ছে, কেউ বা ওখানেই মারা যাচ্ছে। কোনো হাতি আবার গুরুতর আহত হয়। বন্যপ্রাণ নিয়ে যারা কাজ করছেন, তাঁদের রিপোর্ট অনুযায়ী, শুধু আসামেই বছরে ১০০টার কাছাকাছি হাতির অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে। আর এই মৃত্যুর কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হল এই ট্রেঞ্চ। অনেক সময় হাতির বাচ্চাও পড়ে যায় এখানে।
এশিয়ান হাতি বিশ্বের বিপন্ন প্রাণীগুলোর মধ্যে অন্যতম। বিগত ৭৫ বছরে এদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। চা চাষ অর্থনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত জরুরি। আর তার জন্য এই খালগুলোও জরুরি। কিন্তু এর জন্য হাতির মৃত্যুর ঘটনাকে তো অস্বীকার করা যায় না কোনোমতে। তাদের সুরক্ষিত রাখার দায়ও তো বর্তায় আমাদের ওপর। বড় বিপদ হওয়ার আগেই যাতে এশিয়ান হাতিদের রক্ষা করা যায়, সেই চেষ্টাই সরকারি-বেসরকারি সব মহল থেকে করতে হবে, এমনটাই বলছেন পরিবেশবিদরা।