আইফেল টাওয়ার পছন্দ নয়, প্যারিস ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন মঁপাসা

সালটা ১৮৮৯। ফ্রান্সের এক সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ঠিক করলেন একটা লম্বা কোনও স্থাপত্য তৈরি করবেন। সেটা তৈরি করবেন দেশের প্রাণকেন্দ্র, প্যারিসে। যেমন ভাবা, তেমনি কাজ। ১৮৮৯ সালে শেষ হয় সেই স্থাপত্য তৈরির কাজ। সেই থেকে আজ অবধি, সারা বিশ্ববাসীর কাছে এটা অন্যতম আকর্ষণীয় বস্তু হয়ে উঠেছে। তৈরি হয়েছে রূপকথা। হ্যাঁ, কথা হচ্ছে আইফেল টাওয়ার নিয়ে। শিল্পের শহরে এমন কীর্তি যুগে যুগে আকৃষ্ট করেছে শিল্পী থেকে সাধারণ মানুষকে। ভ্যান গঘ, অস্কার ওয়াইল্ড, চার্লস ডিকেন্স প্রমুখরা তাঁদের মুগ্ধতার কথা ব্যক্তও করে গেছেন। বলে গেছেন আইফেল টাওয়ারের রোম্যান্টিক ইমেজের কথা।

কিন্তু একেবারে ভিন্নমতের মানুষও কি নেই? প্যারিসের যাবতীয় আকর্ষণ অনেকটা নিজেই টেনে রেখেছে আইফেল টাওয়ার। তার ফলে ল্যুভঁ মিউজিয়াম, নত্রেঁ ডাম চার্চ, আর্ক দে ট্রায়ম্ফের মতো বিখ্যাত জায়গাগুলি কিছুটা হলেও চাপা পড়ছে। সেটা মেনে নিতে রাজি নয় অনেকেই। অনেকে এটাও মনে করেন যে প্যারিসের মতো শিল্পের শহরে এই ১,০৬৩ ফুট উঁচু লোহার টাওয়ার একেবারেই বেমানান। প্যারিসের ঐতিহ্যের সঙ্গে একেবারেই যায় না। এমনকি, এই মত যারা পোষণ করেন, তাঁদের ‘কমিটি অফ থ্রি হান্ড্রেড’ নামের একটি নিজস্ব সংগঠনও আছে।

শুধু কি সাধারণ মানুষ? মঁপাসার মতো কিংবদন্তি লেখকও আইফেল টাওয়ারের ওপর বেজায় খাপ্পা ছিলেন। এতটাই ছিলেন যে ‘আয়রন লেডি অফ প্যারিস’-এর সামনেও কখনও আসতেন না। খাওয়ার সময়ও যাতে তাকে দেখতে না হয়, তাই তিনি বের করেছিলেন একটি চমকপ্রদ উপায়। খোদ আইফেল টাওয়ারের তলায় রেস্তোরাঁয় খেতেন তিনি। যাতে সামনে, পাশে তাকালে এটিকে চোখে না পড়ে। শুধুমাত্র এর কারণেই তিনি প্যারিস ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। ভাগ্যের পরিহাস এমনই, মৃত্যুর পর তাঁকে যেখানে সমাহিত করা হয়, সেটা আইফেল টাওয়ার থেকে কয়েক মিনিট দূরে। অবশ্য সেখান থেকে এই লৌহ-সৌধকে পুরোপুরি দেখা যায় না। কিছুটা হলেও, মৃত্যুর পর শান্তি পেয়েছেন এ-কথা বলাই যায়।

Latest News See More