যুদ্ধ মানেই তো অসংখ্য বীরত্বের কাহিনি। আর সেই যুদ্ধ যদি হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, তাহলে তো কথাই নেই। পৃথিবীর সমস্ত দেশের সৈনিকই যেন এক অদ্ভুত উদ্যম নিয়ে নেমেছিল লড়াইয়ের ময়দানে। তাঁদের অনেকেই রাষ্ট্রের তরফ থেকে নানা সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন। আবার এখনও নতুন করে সম্মানিত হচ্ছেন অনেকে। বুধবার অস্ট্রেলিয়া সরকার তেমনই এক অবিস্মরণীয় যোদ্ধার সম্মানে প্রদান করল ব্রিটিশ কমনওয়েলথের সবচেয়ে বড় সামরিক পুরস্কার ভিক্টোরিয়া ক্রস। এডওয়ার্ড টেডি সীয়ান, জীবনের শেষ যুদ্ধের প্রায় ৭৮ বছর পর রাষ্ট্রীয় সম্মানে ভূষিত হলেন তিনি। আর এই ৭৮ বছর ধরে তাঁর অসীম বীরত্বের কাহিনি বারবার মনে পড়িয়ে দিয়েছে, সমস্ত আত্মত্যাগের বুঝি সম্মান মেলে না।
দিনটা ১৯৪২ সালের ১ ডিসেম্বর। জাপান অধ্যুষিত টাইমর সাগরের বুকে ঢুকে পড়ল একটি অস্ট্রেলিয় জাহাজ। স্বাভাবিকভাবেই শত্রুপক্ষ আক্রমণ করেছে মনে করে দ্রুত প্রতি আক্রমণের প্রস্তুতি নেয় জাপান বাহিনী। আর অস্ট্রেলিয়ার জাহাজটির দিকে ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি ছুঁড়তে শুরু করে জাপ বিমান বাহিনী। কিন্তু সেই জাহাজটি ছিল আসলে যাত্রীবাহী জাহাজ। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না তাঁরা। কিন্তু সেই জাহাজেই নিরাপত্তার কাজে ছিলেন আঠেরো বছরের এক যুবক। অস্ত্র বলতে সাধারণ একটা বন্দুক। আর তাই নিয়েই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে গিয়েছিলেন টেডি সীয়ান। শেষ পর্যন্ত নিজেও মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েছিলেন। কিন্তু জাহাজের ১৪৯ জন যাত্রীর মধ্যে ৪৯ জনকে জীবিত অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পেরেছিলেন তিনি।
সীয়ানের এই আত্মত্যাগের কাহিনী অস্ট্রেলিয়ার যুদ্ধের ইতিহাসের এক কিংবদন্তি। তাঁর নামে মনুমেন্ট তৈরির পাশাপাশি নৌবাহিনীর একটি সাবমেরিনের নামও রাখা হয়েছে। কিন্তু ভিক্টোরিয়া ক্রসের জন্য এর আগে চারবার আবেদন করা হলেও প্রতিবারই তা খারিজ হয়ে যায়। যুদ্ধের সময় ১৯৪২ এবং ১৯৪৩ সালে পাননি, পাননি ২০১৩ সালেও। প্রতিবারই কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ছিল সামান্য একজন প্রতিরক্ষা কর্মচারীকে এত বড় সম্মান দেওয়া যায় না। তবে এবছর অবশেষে মিলল সেই সম্মান। অস্ট্রলিয়া সরকারের কথায়, এর আগে প্রতিবারই প্রোপজাল লিখতে ভুল করা হয়েছে। আর তাই বাতিল হয়েছে আবেদন। কিন্তু এবারে তাঁর আত্মত্যাগের কথা যথাযথভাবে বর্ণনা করে পাঠানো হয়েছে। আর তার ফলেই এবারে সম্মান মিলল।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ম্যাজিক করেই জার্মানদের হারিয়েছিলেন জ্যাস্পার, আজও গোপন সেই কৌশল