উত্তরবঙ্গের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে কলকাতায় পড়াশুনো করতে এসেছে একটি মেয়ে। একটি ছেলে এসেছে মানভূমের আদিবাসী পল্লী থেকে। এখানে তার ভাষা কেউই বোঝে না। ক্লাসে একটি প্রশ্নের উত্তর হয়তো নিজের ভাষায় দিব্যি সাজিয়ে নিয়েছে সে। অথচ সম্পূর্ণ অচেনা একটা ভাষায় সেই উত্তর দিতে গিয়ে হোঁচট খেতে হচ্ছে। শিক্ষক-শিক্ষিকারা তিরস্কার করছেন, সহপাঠীরা করছে হাসাহাসি। এমন ছবি তো আমরা প্রায়ই দেখতে অভ্যস্ত। আর এই প্রশ্ন তো শুধু শিক্ষাব্যবস্থার নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে মানবাধিকারের প্রশ্নও। এমনটাই মনে করছেন ফার্নান্দ ডি ভারেনেস। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের স্পেশাল রাপার্চার তিনি। মাতৃভাষায় শিক্ষার অধিকারের সওয়াল শোনা গেল তাঁর মুখেই।
আরও পড়ুন
‘গীতাঞ্জলি’-র অনুবাদ কুড়মালি-তে, নিজের বিলুপ্তপ্রায় মাতৃভাষাকে ‘উপহার’ অভিমন্যুর
কিছুদিন আগেই আমরা পেরিয়ে এলাম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। প্রায় প্রতি বছরই ঘুরে ফিরে আসে আঞ্চলিক ভাষাগুলোর হারিয়ে যাওয়ার কথা। তাদের সংরক্ষণের প্রসঙ্গও ওঠে। কিন্তু কাজের কাজ আর কতটুকুই বা হয়। এমনকি শহর কলকাতার বুকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বাংলা ভাষার স্কুলগুলিও। অথচ মাতৃভাষার অধিকার তো মানুষের মৌলিক অধিকার। সেটার উপরেই জোর দিতে বলছেন জাতিপুঞ্জের বিশেষ সচিবরা। প্রাথমিক স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত সব জায়গায় এই অধিকার নিশ্চিত করতে হবে, এমনটাই দাবি রিপোর্টে। আর এই উদ্যোগের জন্য তাঁরা বিশেষভাবে বেছে নিয়েছেন ৬০০০ বিলুপ্তপ্রায় ভাষাকে। যার মধ্যে আছে ‘সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ’ বা ইশারার ভাষাও। পৃথিবীতে এমন মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়, যাঁদের কোনো কথ্য ভাষাই নেই। ভাষার অধিকার তাঁদেরও মৌলিক অধিকার, মনে করছেন ফার্নান্দ।
আরও পড়ুন
মাতৃভাষা বাঁচিয়ে রাখতে লড়ছেন সাপা জনগোষ্ঠীর মানুষরা
একুশ শতক যেন প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড়ের বছর। প্রতিযোগিতা চলছে মানুষে মানুষে, জাতিতে জাতিতে। সংখ্যাগুরু জাতি গিলে খাচ্ছে সংখ্যালঘু জাতির অস্তিত্বকে। আর এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ভাষাকেই হাতিয়ার করতে চাইছেন জাতিপুঞ্জের সচিবরা। কিছুদিনের মধ্যেই নির্দেশ পৌঁছে যাবে সমস্ত দেশের সরকারের কাছে। জাতিপুঞ্জের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। তবে বিভিন্ন দেশের সরকার তার কতটা বাস্তবায়িত করতে পারেন, সেটাই দেখার।