পাহাড় চূড়ায় দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি গাছ। অনেকের কাছে এটি স্রেফ একটি গাছ; কিন্তু সেখানকার বাসিন্দারা এসব মানতে নারাজ। তাঁদের কাছে এই গাছ পবিত্র, একান্ত আপন। তাই যখন গাছটি মারা গেল, সবাই আদিবাসী বাসিন্দারা দুঃখে ভেঙে পড়লেন। যেন নিজেদের লোক চলে গেছে। জিজ্ঞেস করলে হয়তো এই উত্তরই শোনা যাবে তাঁদের মুখ থেকে।
ইকুয়েডরের উত্তরের একটি গ্রাম পুকারা অল্টো। সেখানেই পাহাড়ের ওপর রয়েছে পিনকুল তায়তা। হ্যাঁ, এমনই নাম এই গাছটার। পুকারা অল্টোর প্রায় ৮০০ জন মানুষের শ্রদ্ধার জায়গা। ঠিক যেন আস্ত একটি চার্চ। এরা প্রত্যেকেই কিচওয়া জনগোষ্ঠীর। সেখানকার বাসিন্দারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে শুনে আসছে এই গাছের আশ্চর্য সব ক্ষমতার কথা। তাঁরা বলে, কয়েক হাজার বছর ধরে এই গাছটি এখানে টিকে আছে। এই গ্রামকে, কিচওয়াদের রক্ষা করছে। কোনো কিছুর আঘাতটুকু পড়তে দেয় না এখানে। আর বাসিন্দারাও দু’হাতে ধরে থাকেন তাকে।
এই গাছটিকে ঘিরে তৈরি হয়েছে অনেক মিথ। সেখানে জড়িয়ে রয়েছে অদ্ভুত কিছু লোকাচারও। গত শতাব্দী পর্যন্তও একটা নিয়ম পালন করত পুকারা অল্টোর বাসিন্দারা। গ্রামে যখনই কোনো সদ্যোজাত মারা যেত, তার দেহ নিয়ে এসে এই পিনকুল তায়তা গাছের তলায় এনে কবর দেওয়া হত। মনে করা হত, এই গাছটি ওই অভাগা শিশুদের আত্মা ধরে রাখে। ফলে আরও পবিত্র হয়ে যায় গ্রাম। কালে কালে উন্নয়নের কবলে আশেপাশের অনেক গাছই কাটা পড়েছে। কিন্তু এই একটি গাছকে কিছুতেই হাতছাড়া করেননি গ্রামবাসীরা। বুকে আগলে রেখেছেন। প্রতিদিন যত্ন করেছেন। সেবা করেছেন; ঠিক যেন দেবতা! ‘যেন’ কেন, ও তো দেবতাই!
তবে জীবনের যাত্রাও থেমে যায় একদিন। না চাইতেও মৃত্যু চলে আসে সম্পর্কের মাঝে। সেই কালো ছায়া ঘনিয়ে এল এই বছরই। মারা গেল ইকুয়েডরের পিনকুল তায়তা। স্বাভাবিক কারণেই মারা যায় গাছটি। সেই থেকে মন খারাপ পুকারা অল্টো’র। যেন অভিভাবককে হারিয়েছেন তাঁরা! গাছের অবশিষ্টাংশকে সাদা কাপরে জড়িয়ে শেষকৃত্য পালন করেন তাঁরা। যেখানে গাছের গুঁড়ি ছিল একসময়, সেখানে রেখে দেন ফলমূল। পরবর্তী জীবনে ‘ঈশ্বর’-এর যাতে কোনো সমস্যা নয়। মানুষ আর গাছের এমন অদ্ভুত, পবিত্র সহাবস্থান আর কবে দেখা গেছে? যেখানে সবার মুখ থমথমে; সারাটা সময় কেঁদে চলেছেন সবাই! মনুষ্যত্ব কি এভাবেই ছড়িয়ে পড়বে না পৃথিবীতে? এমন পবিত্রতা কি ছড়িয়ে যাবে না উপত্যকায়!
আরও পড়ুন
শ্রোতার আসনে সারি সারি গাছ, বার্সেলোনার অপেরায় বিশ্বজুড়ে শুধুই মুগ্ধতা
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
একটিমাত্র গাছ দিয়েই তৈরি আস্ত জঙ্গল, ভারতেই রয়েছে এই স্থান