দূষণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিশ্ব উষ্ণায়ন। ক্রমাগত বেড়ে চলেছে পৃথিবীর তাপমাত্রা। বদলে যাচ্ছে, বিভিন্ন অঞ্চলের জলবায়ু। গলছে দুই মেরুর বরফ। দক্ষিণ মেরুর পরিস্থিতি ক্রমেই সঙ্কটময় হয়ে উঠছে, দাবি করেছেন আন্টার্কটিকা ফেরত মার্কিন গবেষকদের একটি দল।২০০৭ সাল থেকে ক্রমাগত দক্ষিণমেরুতে যাতায়াত জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাট্রিসিয়া ইয়েগারের। তিনি দেখেছেন, প্রায় স্ট্যাচু অফ লিবার্টির উচ্চতার দুটি হিমশৈল। তবে তাপমাত্রা ক্রমে বেড়ে ওঠার কারণে, ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে সেগুলির উচ্চতা। পরিস্থিতির পরিবর্তনের বড়োসড়ো প্রভাব যে বাস্তুতন্ত্রেও পড়বে, একথা বলা বাহুল্য। মেরিন বায়োলজিস্টদের মতে, বদলে যাওয়া বাস্তুতন্ত্রের সঙ্গে মানিয়ে নিচ্ছে মূলত জলজ প্রাণীরা।
একটি ‘পলিনিয়া’য় ইয়েগার ও তাঁর টিমের নজরে পড়েছে একটি এলিফ্যান্ট সিল। পলিনিয়া - অর্থাৎ যেখানে সবচেয়ে বেশি সামুদ্রিক বরফ ভেসে থাকতে দেখা যায়। সমুদ্রের এই স্থানটি মোটেই সিল মাছেদের বিচরণক্ষেত্র নয়। ফলে এই বিচ্যুতির কারণ হিসেবে ইয়েগার দায়ী করেছেন, হিমশৈল গলা জলে অতিরিক্ত আয়রন বেড়ে যাওয়াকেই। সাধারণত আন্টার্কটিকার জলে ভাসমান ফাইটোপ্ল্যানকটন সিল মাছের খাদ্য। এবার পলিনিয়ার জলে ফাইটোপ্ল্যাংকটনের উপযোগী উপাদান থাকলেও অভাব ছিল আয়রনের। কিন্তু উষ্ণায়নের কারণে বরফগলা জল মিশেছে পলিনিয়ার জলে। গজিয়ে উঠছে ফাইটোপ্ল্যাংকটন। এবং খাবারের খোঁজে ঘুরতে ঘুরতে অজানা জলে সাঁতারাচ্ছে এলিফ্যান্ট সিল।
শুধু তাই না, এই অতি-উষ্ণায়নে চূড়ান্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এডিলেড পেঙ্গুইনদের বাসস্থান। আন্টার্কটিকার পশ্চিমপ্রান্তে সামুদ্রিক হিমশৈল ঘেরা উপদ্বীপে পেঙ্গুইনদের বাস। বরফ গলার সঙ্গে সঙ্গে কমেছে পেঙ্গুইনদের সংখ্যা। পাশাপাশি বদলে গিয়েছে অন্যান্য প্রাণীদের খাদ্যাভ্যাস এবং এবং আচরণ। ইয়েগার বলছেন, বরফ গলার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে, অস্তিত্বের যুদ্ধ। ‘এই যুদ্ধে কেউ জিতবে বা কেউ হারবে। কিন্তু গোটা পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রেই আমূল পরিবর্তন আসবে।’
মানবসমাজও এই বাস্তুতন্ত্রেরই অংশ। ফলে তাদের পরিণতির কথা ভেবেই শিউরে উঠছেন আন্টার্কটিকা ফেরত বিজ্ঞানীরা।
Powered by Froala Editor