পৃথিবী তার নিজের অক্ষের চারিদিকে সারাদিনে একবার প্রদক্ষিণ করছে। আর সেই অক্ষের একদিকে উত্তর মেরু এবং অন্যদিকে দক্ষিণ মেরু। তবে পৃথিবীর কী এই দুটি মেরু? প্রশ্নটা শুনে অবাক লাগলেও পৃথিবীর দুই প্রান্তে তিনটি করে মেরুর উপস্থিতি আছে। আর এই মেরুগুলির ভৌগলিক অবস্থানও স্থির নয়। মহাদেশগুলি যেমন নিজস্ব গতিতে অবস্থান পরিবর্তন করে, তেমনই অবস্থান পরিবর্তন করে পৃথিবীর মেরুগুলিও। কানাডার লিড ইউনিভার্সিটির গবেষণায় ধরা পড়েছে সেই ছবি। আর গবেষকদের দাবি, উত্তরের একটি মেরু প্রতি বছর ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার গতিতে স্থান পরিবর্তন করছে।
পৃথিবী যে অক্ষের চারিদিকে প্রদক্ষিণ করে, তার দুপ্রান্তে আছে ভৌগলিক মেরু। ওপর দুই জোড়া মেরু পৃথিবীর চুম্বকীয় চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। পৃথিবীকে একটি আদর্শ দ্বিমেরু চুম্বক মনে করলে তার দুই প্রান্তে দুটি চুম্বকীয় মেরু থাকতে হয়। এই দুই মেরু হল ভূচুম্বকীয় মেরু। তবে পৃথিবীর চৌম্বক শক্তি বাস্তবে দ্বিমেরু নয়। তাই তার প্রকৃত চুম্বকীয় মেরু এবং ভূচুম্বকীয় মেরু একই বিন্দুতে অবস্থিত নয়। এই প্রকৃত চুম্বকীয় উত্তর মেরু কিছুদিন আগে পর্যন্ত ছিল কানাডার উত্তর অংশে। তবে সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে এই মেরুটি ক্রমশ সরে যাচ্ছে রাশিয়ার সাইবেরিয়া অঞ্চলের দিকে।
আধুনিক মানচিত্রের সঙ্গে জড়িত অনেক যন্ত্রপাতি কাজ করে পৃথিবীর চুম্বকীয় শক্তির উপর। জাহাজ বা এরোপ্লেনের গতিবিধি থেকে শুরু করে সাধারণ মোবাইল গেজেটের অবস্থান নির্ণয়ে সাহায্য করে এই শক্তি। তবে হঠাৎ তাতে কিছু ভুলভ্রান্তি নজরে আসছিল। আর এর পরেই জানা গেল তার প্রকৃত কারণ। মেরুর অবস্থানই যে বদলে গিয়েছে। তার নতুন অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অবশ্য সমস্ত গেজেট সংশোধন করার ব্যবস্থা শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এই পরিবর্তনের কারণ সম্বন্ধে এখনও যথেষ্ট ধোঁয়াশার মধ্যে আছেন বিজ্ঞানীরা। লিড ইউনিভার্সিটির গবেষকদের দাবি, পৃথিবীর কেন্দ্রে আউটার কোর অংশে তরলের তাপ ও চাপের পরিবর্তনের জন্যই এমন ঘটনা ঘটছে। অবশ্য এখনও এই ধারণা প্রমাণিত নয়। তবে এই তত্ত্ব প্রমাণিত হলে পৃথিবীর কেন্দ্রের চরিত্র সম্পর্কে অনেক তথ্যই জানা যাবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।