একসময় এই পৃথিবী ছিল জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ড। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা ঠান্ডা হয়েছে। কিন্তু বাইরের স্তর ঠান্ডা হলেও এখনও পৃথিবীর পাঁজরের ভিতর জ্বলছে আগুন। তরল ম্যান্টলের উপর ভাসমান ভূত্বক। সেই ম্যান্টলও যে একদিন কঠিন হবে, সেটা বিজ্ঞানীরা আগেই জানতেন। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, সেই গতিও ক্রমশ বাড়ছে। আগে যা অনুমান করা হয়েছিল, তার চেয়ে অনেক আগেই পৃথিবীর ম্যান্টল (Mantle) কঠিন হয়ে উঠবে। আর তখন ম্যাগমা (Magma) বলেও কোনো পদার্থের অস্তিত্ব থাকবে না।
সম্প্রতি ‘আর্থ অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্স লেটার্স জার্নাল’-এ প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণাপত্র। সুইৎজারল্যান্ডের গবেষক মোতোহিতো মুরাকামি এবং তাঁর সহযোগীরা মিলে তৈরি করেছেন নতুন একটি মডেল। পরীক্ষাগারের মধ্যেই ব্রিজম্যানাইট যৌগ ব্যবহার করে তৈরি হয়েছে এই মডেল। যদিও পৃথিবীর শিলাস্তর নানারকম উপাদান দিয়ে তৈরি। তবে তার সার্বিক ভৌত চরিত্র অনেকটাই মিলে যায় এই যৌগের সঙ্গে। আর সেইজন্যই এই যৌগটিকে বেছে নিয়েছেন তাঁরা।
পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, পৃথিবী যত শীতল হচ্ছে, ততই বাড়ছে তার তাপ পরিবহন ক্ষমতা। আর এর ফলেই ভূগর্ভস্থ তাপ বাইরে বেরিয়ে আসার প্রবণতাও বাড়ছে। এভাবেই ক্রমশ পৃথিবী দ্রুত শীতল হয়ে উঠছে। অবশ্য এতদিন বিজ্ঞানীরা মনে করতেন উলটোটাই। অর্থাৎ শীতল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপ পরিবহন ক্ষমতা কমার কথা। সেক্ষেত্রে পৃথিবী সম্পূর্ণ কঠিন হয়ে ওঠার সময়টা হয়তো কোনোদিনই আসত না। কিন্তু পরীক্ষা বলছে বাস্তব ছবিটা আলাদা।
এভাবেই পৃথিবী একদিন বুধ বা শুক্রের মতো সম্পূর্ণ কঠিন গ্রহে পরিণত হবে বলে মনে করছেন মুরাকামি। অবশ্য তার জন্য কত সময় লাগবে, তা নিশ্চিতভাবে বলা এখনও সম্ভব নয়। তবে সেই সময়ে পৃথিবীর অবস্থা কেমন হবে, তার একটা আন্দাজ পাওয়া যায়। এটুকু বলা যায়, তখন আর ভূমিকম্পের কোনো সম্ভাবনা থাকবে না। মহাদেশ বা মহাসাগরগুলো আর নিজেদের জায়গাও বদলাবে না। তখন আর কোনো আগ্নেয়গিরি লাভা অগ্ন্যুদগার ঘটাবে না। সবটাই একটা অজড় স্থির পিণ্ডে পরিণত হবে। এমন একটা স্পন্দনহীন গ্রহে প্রাণের অস্তিত্বও আর সম্ভব নয় কোনোভাবে।
আরও পড়ুন
পৃথিবীকে ঘিরে রয়েছে মহাজাগতিক বুদবুদ!
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
গলছে পৃথিবীর প্রশস্ততম হিমবাহ, হাজির পৃথিবীর ‘ডুমস ডে’!