ঘুমিয়ে রয়েছে আগ্নেয়গিরি। কিন্তু জেগে উঠলেই সমূহ বিপদ। ঢাকা পড়ে যেতে পারে সূর্য। আর সূর্যের আলো ছাড়া পৃথিবীতে প্রাণের সম্ভাবনা যে ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসবে তা নিয়ে বেশ চিন্তিত বিজ্ঞানীরা।
এরকমই এক আগ্নেয়গিরি রয়েছে আমেরিকার ইয়োলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কে। কয়েকশো মিটার গভীর এই আগ্নেয়গিরি আপাতত সুপ্ত অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু তাতেই ঘুম উড়ে গেছে বিজ্ঞানীদের। কারণ এই আগ্নেয়গিরি জেগে উঠলে বেশ কয়েক যুগের জন্য সূর্য ঢাকা পড়ে যেতে পারে। আর তাতে প্রাণ সংকটে পড়বে এই নীল গ্রহ।
যদিও ইয়োলোস্টোনের এই আগ্নেয়গিরি মাত্র তিনবার জেগে উঠেছিল, শেষবার ২.১ মিলিয়ন বছরের মধ্যে। অর্থাৎ গড়ে প্রতি ছ লক্ষ বছর অন্তর। তাই এখুনি এই আগ্নেয়গিরির জেগে ওঠার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবুও বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন এমন একটি পথ খোঁজার যাতে এই আগ্নেয়গিরি আর কখনো না জেগে ওঠে।
২০১৫ সালে নাসার জে পি এলের বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যে একটা উপায় বার করেছেন এই আগ্নেয়গিরিকে ঠান্ডা রাখার জন্যে। পৃথিবীর কেন্দ্রে যখন উষ্ণতা অত্যধিক বৃদ্ধি পায় তখনই এই আগ্নেয়গিরি জেগে ওঠে।
ইয়োলোস্টোনের এই আগ্নেয়গিরির তাপ বিকিরণ ক্ষমতা দিয়ে ছয় থেকে সাতটি বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থার বিদ্যুতের সমান। এত পরিমাণ তাপের ষাট থেকে সত্তর শতাংশ বেরিয়ে যায় উষ্ণকুণ্ড দিয়ে আর বাকিটা মাটির তলাতেই থাকে।
বিজ্ঞানীদের পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই অতীব শক্তিধর আগ্নেয়গিরিকে বাগে আনতে এর চারিদিকে কুয়ো খনন করাতে হবে। প্রতিটি কুয়োর গভীরতা হতে হবে অন্তত দশ কিমি। এখান দিয়ে ঠান্ডা জল পাঠানো হবে যা আগ্নেয়গিরির ম্যাগমাকে ঠান্ডা করবে। ঠিক যে উপায়ে গাড়ির রেডিয়েটরকে জল দিয়ে ঠান্ডা করা হয়।
এই জল তিনশো চল্লিশ ডিগ্রি অবধি গরম হতে পারে যা গবেষকদের মতে তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ইয়োলোস্টোন এবং তার সংলগ্ন এলাকার জন্য পরবর্তীতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
যদিও খাতায়কলমে সহজ হলেও বাস্তবে এই পরিকল্পনা মাফিক কাজ করা খুবই কঠিন। আগ্নেয়গিরিকে ঠান্ডা রাখতে প্রায় কুড়ি গিগাওয়াট তাপ বের করে আনতে হবে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এ কাজ শেষ হতে প্রায় ষোলো হাজার বছর লাগবে। খরচ আনুমানিক সাড়ে ত্রিশ লক্ষ কোটি টাকা যা বার্ষিক বাজেটের কুড়ি শতাংশ।
বিজ্ঞানীদের আরও আশঙ্কা যে এই খননকার্যের ফলে বিপরীত প্রতিক্রিয়াও হতে পারে। আগ্নেয়গিরি জেগে ওঠার সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তাঁরা।
ছ লক্ষ বছর অন্তর জেগে ওঠার সম্ভাবনাই এখন বিজ্ঞানীদের ভরসা। তাই তাঁরা আরও উন্নত ও কম সময়সাপেক্ষ কোনো পরিকল্পনার কথা ভাবছেন। তার মধ্যে ইয়েলোস্টোনের এই আগ্নেয়গিরি যতদিন ঘুমোবে, ততদিন পৃথিবীর মঙ্গল।