আকারে-উষ্ণতায় পৃথিবীর মতোই, আছে প্রাণের সম্ভবনাও; নতুন গ্রহের সন্ধান

এই ব্রহ্মাণ্ডে এমন এক বিশেষ অবস্থানে আছে পৃথিবী, যে কেবল এখানেই প্রাণ আছে। এই গ্রহের আকার, উষ্ণতা, উপাদান সমস্তকিছু মিলে এমন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। তবে অন্য কোথাও কি প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে না? মানুষের কল্পনায় তো ভিনগ্রহের নানা প্রাণী জন্ম নিয়েছে। তবে শুধুই কল্পনায় নয়, বাস্তবেও এমন সম্ভবনার কথা পুরোপুরি উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিজ্ঞানীরা। বরং নিরন্তর সন্ধান চালাচ্ছেন এমন কোনো গ্রহের। প্রাণের অস্তিত্ব না থাকলেও অন্তত প্রাণ ধারণের উপযুক্ত পরিবেশ তো থাকতেই পারে। কিন্তু পৃথিবীর মতো হুবহু পরিবেশ এখনও কোনো গ্রহেই পাওয়া যায়নি।

তবে কোনো সূত্র এখনও পাওয়া না গেলেও, বিজ্ঞানের জগতে হতাশার কোনো স্থান নেই। আর অনুসন্ধানের সূত্র ধরেই বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেলেন একটি গ্রহকে। আকার, উষ্ণতা নানা দিক থেকেই পৃথিবীর সঙ্গে তার ভারী মিল। পৃথিবী থেকে ৩০০ আলোকবর্ষ দূরে থাকা এই গ্রহটির নাম কেপলার-১৬৪৯সি। কেপলার নামের স্পেস টেলিস্কোপের সাহায্যে এটিকে শনাক্ত করা গিয়েছে, তাই এমন নাম। ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে এই টেলিস্কোপ ২৬৮১টি নতুন গ্রহের সন্ধান দিয়েছে। সেগুলির মধ্যেই একটি ১৬৪৯সি।

প্রথমে কম্পিউটার অ্যালগরিদমের নির্দেশ অনুযায়ী বিজ্ঞানীরা মনে করেন এই গ্রহের কোনো অস্তিত্ব নেই। যান্ত্রিক গোলযোগের জন্য এমন তথ্য পাচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু সমস্ত তথ্য খতিয়ে দেখে নাসার বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হন যে এই গ্রহের অস্তিত্ব আছে। একটি বামন নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকা গ্রহটির আকার পৃথিবীর চেয়ে মাত্র ৬ শতাংশ বেশি। আর সূর্য থেকে পৃথিবীতে যে পরিমাণ আলো পৌঁছয়, এই গ্রহটিতে আলো পৌঁছয় তার ৭০ শতাংশ। অতএব উষ্ণতাও মোটামুটি একইরকম হওয়ার সম্ভবনা। অবশ্য গ্রহটি কী উপাদান দিয়ে তৈরি, সেই সম্বন্ধে কোনো তথ্য এখনও বিজ্ঞানীদের কাছে নেই।

তবে নানা দিক থেকে সম্ভবনা প্রকট হয়ে উঠলেও সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ থেকেই যাচ্ছে। যে নক্ষত্রের কক্ষপথে এই গ্রহটি পরিক্রমণ করে, তার থেকে এর দূরত্ব বেশ কম। মাত্র সাড়ে উনিশ দিনে বছর এই গ্রহে। অতএব নানারকম বিকিরণের প্রভাব পড়ার সম্ভবনা যথেষ্ট। এখনও অবধি তেমন কোনো বিকিরণের নমুনা অবশ্য পাওয়া যায়নি। কিন্তু আশঙ্কা থেকেই যায়। আর সেক্ষেত্রে কোনোভাবেই প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয় এই গ্রহে। আপাতত গবেষণা চলছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে এখনও বেশ কয়েক বছর লেগে যাবে বিজ্ঞানীদের।

তবে মানুষের কল্পনা তো এতো খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে চিন্তিত নয়। তাই জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে নানা মহলে। এই গ্ৰহেই কি কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব আছে? নাকি মানুষ আরেকটা উপনিবেশ বানাতে চলেছে নতুন পৃথিবীতে? এমন অনেক সম্ভবনার কথা ফিরছে মানুষের মুখে মুখে। আর নাসার বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে শেষ কথা শোনার অপেক্ষায় আছেন সবাই।

More From Author See More