সারা পৃথিবীজুড়ে লকডাউন। পরিবেশ দূষণ কমেছে। প্রকৃতি যেন খানিকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ পেয়েছে। এমনটাই মনে করেছিলেন অনেকে। কিন্তু সত্যিই কি চিত্রটা সেরকম? গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচ এবং মেরিল্যান্ড ইউনিভার্সিটির যৌথ রিপোর্ট যেন উল্টোদিকের ছবিটাই হাজির করল। সম্প্রতি প্রকাশিত এই রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৯ সাল থেকে ২০২০ সালে সারা পৃথিবীজুড়ে বনভূমি হ্রাসের পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে এক ধাক্কায়। আর গত দুই দশকের মধ্যে ২০২০ সালে পরিমাণ ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ!
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ২০২০ সালে ৪.২ মিলিয়ন হেক্টর বনভূমি হারিয়ে গিয়েছে। আয়তনটা প্রায় গোটা নেদারল্যান্ডস দেশের সমান। ২০১৯ সালের তুলনায় পরিমাণ বেড়েছে ১২ শতাংশ। তবে ২০১৬ এবং ২০১৭ সালের পরিসংখ্যানকে পিছনে ফেলতে পারেনি ২০২০ সাল। গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচের প্রোজেক্ট ম্যানেজার মিকাইলা ওয়েসির মতে, লকডাউনে সার্বিক দূষণ কমলেও বনভূমি হ্রাসের ক্ষেত্রে তার প্রভাব পড়েনি কিছুই। বরং আইনশৃঙ্খলার অবনতির কারণেই সেই পরিমাণটা আরও বেড়েছে।
বনভূমি ধ্বংসের ক্ষেত্রে এবছরেও সবচেয়ে এগিয়ে আছে ব্রাজিল। সেইসঙ্গে প্রতিবেশি বলিভিয়াতেও বিস্তীর্ণ বনভূমি ধ্বংস হয়েছে। মূলত পৃথিবীজুড়ে নানা অগ্নিকাণ্ডেই সবচেয়ে বেশি বনভূমি ধ্বংস হয়েছে। তবে বেশিরভাগ অগ্নিকান্ডই প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে ঘটেনি। বরং মানুষ তার পরিসর বাড়ানোর জন্যই ধ্বংস করে চলেছে বনভূমি। নানা আন্তর্জাতিক চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা যেন কেবল কাগজে লেখা কিছু অক্ষর। একসঙ্গে ২০০টি বহুজাতিক সংস্থা ৮ বছর আগে জানিয়েছিল, ২০২০ সালের মধ্যে বনভূমি হ্রাসের হার অর্ধেকে নামিয়ে আনা হবে। সেই লক্ষমাত্রা তো পূরণ হয়ইনি, বরং পূর্ববর্তী বছরকেও পিছনে ফেলে গিয়েছে।
আসলে প্রতিটা দেশের সরকার এবং শিল্পগোষ্ঠীগুলির মিলিত উদ্যোগই পারে যেটুকু বনভূমি বেঁচে আছে তাকে টিকিয়ে রাখতে। তবে সেই সচেতনতা কতটা গড়ে উঠছে, তা এইসমস্ত রিপোর্ট থেকেই স্পষ্ট বোঝা যায়। কিন্তু অক্সিজেনের বিরাট উৎসকে বাঁচিয়ে রাখতে না পারলে যে মানুষের অস্তিত্বও আর বেশিদিন টিকবে না, সেটা উপলব্ধি করার সময় এসে গিয়েছে।
আরও পড়ুন
ফেসবুক মার্কেটপ্লেসেই বিক্রি হচ্ছে আমাজনের বনভূমি, প্রশাসনের নাকের ডগায় বে-আইনি ব্যবসা
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
চোরাশিকার ঠেকেছে শূন্যে, সম্বলপুর বনভূমির ‘ত্রাতা’ ১৫ জন মহিলা