বিশ্বের ৯৯.৯ শতাংশ প্রজাতির প্রাণীই অবলুপ্ত হয়ে গেছে পূর্ববর্তী ৫টি গণ-অবলুপ্তিতে। আর ইতিহাসের ষষ্ঠ অবলুপ্তির মধ্যে দিয়েই যাচ্ছে বর্তমান সময়। এমনই আশঙ্কার কথা শোনালেন বিজ্ঞানীরা। তবে অতীতের সমস্ত অবলুপ্তিকেই ছাপিয়ে গেছে বর্তমান অবলুপ্তির হার। অতীতের থেকে প্রায় একশো গুণ দ্রুত বর্তমানে পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যাচ্ছে প্রজাতির সংখ্যা। যার ফলে চলতি শতাব্দীর মধ্যেই পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে ৯০ শতাংশ প্রাণী।
গবেষকরা জানাচ্ছেন, বর্তমানে পৃথিবীতে আনুমানিক ৬০ থেকে ১ কোটি প্রজাতির জীবের বসবাস। যার মধ্যে মাত্র ১০ লক্ষ প্রজাতিকে শনাক্ত করতে পেরেছি আমরা। যাদের এখনও পর্যন্ত চিহ্নিত করাই সম্ভব হয়ে ওঠেনি আমাদের, সেইসব প্রজাতির জনসংখ্যা ইতিমধ্যেই আশঙ্কাজনক অবস্থায়। ফলে মানুষের অজান্তেই পৃথিবী থেকে প্রতিদিন হারিয়ে চলেছে সেইসব প্রাণী, উদ্ভিদ।
অন্যদিকে বিজ্ঞানের কাছে পরিচিত প্রজাতিগুলিও ভয়ঙ্কর ঝুঁকির সম্মুখীন। উদাহরণ হিসাবে গবেষক ড্যানিয়েল সিম্বারলোফ জানান, পৃথিবীতে বর্তমানে রয়েছে ১০ হাজার প্রজাতির পাখি। গত ৫০০ বছরে আনুমানিক ১২৮টি প্রজাতিই হারিয়ে গেছে পৃথিবী থেকে। বর্তমানে গুরুতর আশঙ্কার মধ্যে রয়েছে আরও ১২০০টি প্রজাতি। এর মধ্যে প্রায় ৫০০-এর বেশি প্রজাতিই হারিয়ে যাবে এই শতাব্দীর মধ্যেই। অর্থাৎ, সাম্প্রতিক সময়েই প্রায় ২০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে অবলুপ্তির হার।
তবে গত কয়েক শতাব্দীদের বিভিন্ন প্রজাতির অবলুপ্তির প্রধান কারণ ছিল শিকার। এখন সেখান থেকে মূল সমস্যা সরে এসেছে আবাসস্থলে। তবে তার পিছনে ধ্রুবক হয়ে শুরু রয়ে গেছে মানুষের ক্রিয়াকলাপের প্রভাব। নগরায়ন এবং বনভূমি ধ্বংসের কারণে অধিকাংশ প্রজাতিই হারাচ্ছে তাদের চিরাচরিত বাসস্থান। অনেক সময় নতুন অঞ্চলে তারা স্থানান্তরিত হলেও শিকারী প্রাণীদের কারণে বিপন্ন হচ্ছে তাদের অস্তিত্ব।
এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তন তো রয়েছেই। যা নিঃশব্দেই বিভিন্ন প্রাণীদের টিকে থাকা দুরূহ করে ফেলছে। যেমন, মেরুবরফ গলে গেলে আর্কটিক ও আন্টার্কটিক অঞ্চলে বসবাসকারী সমস্ত প্রাণীই অবলুপ্ত হয়ে যাবে এক ধাক্কায়। মানুষ সেই ধ্বংসলীলারও সাক্ষী হবে এই শতাব্দীর মধ্যেই। সব মিলিয়ে গণ-অবলুপ্তির প্রহর গুনছে নীলগ্রহ।
তবে এতে ভ্রূক্ষেপ নেই অধিকাংশ দেশের প্রশাসনেরই। গবেষকদের সতর্কতা সত্ত্বেও নেওয়া হয়নি কোনো কর্মসূচি। ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার ১৫০ জন বিজ্ঞানী প্রথম সরব হয়েছিলেন এই পরিস্থিতি নিয়ে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দ্বারস্থ হয়েছিলেন তাঁরা সংরক্ষণ এবং প্রকৃতি সুরক্ষার আবেদন চেয়ে। সেই একই বছরে ৩০ জন নোবেলজয়ী-সহ ৩৭৫ জন বিজ্ঞানী খোলা চিঠি দিয়েছিলেন জাতিসংঘে। প্রতিটি দেশেই যাতে পৃথকভাবে পরিবেশ সুরক্ষার কর্মসূচি নেওয়া হয়, সেই অনুরোধই করেছিলেন তাঁরা।
আরও পড়ুন
বিশ্বের ইতিহাসে উষ্ণতম বছর ২০২০, জলবায়ুর দ্রুত পরিবর্তনে বাড়ছে আশঙ্কা
কিন্তু তাতে লাভ হয়নি তেমন কিছু। কয়েকটি দেশ ছাড়া সেইভাবে গুরুত্ব দেয়নি কেউ-ই। বরং ২০১৯-২০-এর মধ্যে আরও ভয়ঙ্কর চেহারা নিয়েছে পরিস্থিতি। আরও বেড়েছে বননিধন, শিল্পাঞ্চল, দূষণ। এমনকি গত বছর পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয় উষ্ণতম বছর হিসাবেও চিহ্নিত করা হয়েছে। আবহাওয়া পরিবর্তনের এই হার আগামী ১০ বছরের মধ্যে পরিবর্তিত না হলে, দোরগোড়ায় এসে উপস্থিত হবে গণ-অবলুপ্তি। যার অঙ্গ হিসাবে হারিয়ে যাবে মানব-সভ্যতার একাংশও...
Powered by Froala Editor