সূর্য, চন্দ্র, আরও ৭টি গ্রহ, ৫টি বামনগ্রহ, অসংখ্য গ্রহাণু এবং ধূমকেতু— এই নিয়ে ছোট্ট পরিবার পৃথিবীর। এর বাইরেও আদিগন্ত এক মহাজগৎ থাকলেও, তার প্রভাব পৃথিবীতে পড়ে না বললেই চলে। নাকি নীরবেই ব্রহ্মাণ্ডের মহাজাগতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে পৃথিবী? হ্যাঁ, সম্প্রতি এমন সম্ভাবনার ওপরেই বসল গবেষকদের শিলমোহর। আকাশগঙ্গায় (Milky Way) অবস্থিত এক দৈত্যাকার চুম্বকীয় সুড়ঙ্গের (Magnetic Tunnel) মধ্যেই ভেসে রয়েছে পৃথিবী। আর স্পষ্টতই তার প্রভাব পড়ছে আমাদের নীলগ্রহের ওপর।
হ্যাঁ, শুধু পৃথিবী নয়। গোটা সৌরজগৎটাকেই ঘিরে রয়েছে এক শক্তিশালী চুম্বকীয় টানেল। যা মূলত আকাশগঙ্গার মধ্যে দুটি শক্তিশালী চুম্বকক্ষেত্রের সংযোগরেখা। সম্প্রতি অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে সংশ্লিষ্ট গবেষণাপত্রটি। টরোন্টোর ডানলপ ইনস্টিটিউট, কানাডার ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিল এবং ব্রিটিশ কলোম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সামনে এনেছেন এই চাঞ্চল্যকর মহাজাগতিক ঘটনাক্রমগুলিকে।
কিন্তু কীভাবে গবেষকদের চোখে ধরা পড়ল এই ঘটনা? সেই উত্তর দেওয়ার আগে পিছিয়ে যেতে হবে কয়েক দশক। ১৯৬৫ সাল সেটা। প্রথমবারের জন্য জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছিলেন দুটি দৈত্যাকার গ্যাস ক্লাস্টার বা ভাসমান গ্যাসপুঞ্জ— ‘দ্য নর্থ পোলার স্পার’ এবং ‘দ্য ফ্যান রিজিয়ন’। দুটি মহাজাগতিক বস্তুই সৌরজগৎ থেকে কমপক্ষে ৩৫০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। দুই বিপরীত প্রান্তে। উল্লেখ্য, তার পর থেকে একাধিকবার গবেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এই দুই ভাসমান গ্যাসপুঞ্জ। আর তার অন্যতম কারণ হল, উজ্জ্বল রেডিও ওয়েভ এবং চুম্বকীয় তরঙ্গের বিচ্ছুরণ।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হত, এই দুই মেঘপুঞ্জ দুটি পৃথক পরিকাঠামো। তাদের মধ্যে যোগ নেই কোনো। তবে সেই ধারণাই ভাঙল সম্প্রতি। গবেষকরা বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ করেন, মূলত তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গের আদান-প্রদান চলে এই দুটি মেঘপুঞ্জের মধ্যে। সাধারণ রেডিও বা চুম্বকীয় বিস্ফোরণের ক্ষেত্রে সমস্ত দিকেই তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না এই দুই মহাজাগতিক পদার্থের ক্ষেত্রে। বরং সেই তরঙ্গ অনেকটা একমুখী। সেই তথ্য বিশ্লেষণ করেই সিদ্ধান্তে পৌঁছান গবেষকরা। আদতে, একটি চুম্বকীয় সুড়ঙ্গ বা শক্তিশালী চুম্বকীয় ক্ষেত্র থাকায়, যেকোনো রেডিও তরঙ্গ এই পথে যেতেই বাধ্য হয়।
আরও পড়ুন
বড়োদিনে মহাকাশে পাড়ি 'জেমস ওয়েব'-এর
গবেষকদের গণনা অনুযায়ী, এই একই পথে অবস্থিত পৃথিবীও। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তার প্রভাব পড়ে পৃথিবীর ওপরেও। ঠিক কী ধরনের প্রভাব? একটা ছোট্ট উদাহরণ দিলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে বিষয়টা। চুম্বকক্ষেত্রের মধ্যে কোনো ছোট্ট কম্পাসকে রাখলে, দিক পরিবর্তন হয়ে যায় তার। ঠিক একই ঘটনা ঘটছে পৃথিবীর সঙ্গেও। শক্তিশালী দুটি ‘ফিলামেন্ট’-এর মধ্যে অবস্থিত হওয়ায় ক্রমশ বদলাচ্ছে পৃথিবীর চুম্বকীয় মেরুর অবস্থান। বাহ্যিক এই চুম্বক ক্ষেত্রের সঙ্গেই সরলরেখায় পৌঁছানোর চেষ্টা করছে পৃথিবীর নিজস্ব চুম্বকক্ষেত্র। যদিও আশঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই বলেই আশ্বস্ত করছেন গবেষকরা। কেননা, এই পরিবর্তন হচ্ছে অত্যন্ত ধীর গতিতে।
আরও পড়ুন
মহাকাশে ফুড ডেলিভারি! কীর্তি জাপানের বিলিয়নেয়ারের
জানার থেকে অজানার পরিধি ঠিক কতটা বেশি— তা আরও একবার প্রমাণিত হল সাম্প্রতিক এই গবেষণায়। মহাবিশ্বের সিংহভাগ রহস্যেই এখনও মানুষের নাগালের বাইরে। তা প্রকাশ্যে এলে আমাদের বিস্মিত না হয়ে সত্যিই উপায় নেই কোনো…
আরও পড়ুন
৪টি সোনা ও ১টি রুপো – মহাকাশবিজ্ঞানের অলিম্পিয়াডে প্রথম স্থানে ভারত
Powered by Froala Editor