পৃথিবীর একটাই উপগ্রহ, চাঁদ। শুধু মাঝেমধ্যে একেকটি নতুন উপগ্রহ এসে পৃথিবীর কক্ষপথে জায়গা করে নেয়। কিছুদিন কাটায় চাঁদের সঙ্গে। তারপর আবার বিদায় নেয়। চলতি বছরের শুরুতেও এমন একটি উপগ্রহ মাস দুয়েকের জন্য পৃথিবীর কক্ষপথে সময় কাটিয়ে গিয়েছে। কিন্তু কীভাবে একটি মহাজাগতিক বস্তু এসে পৃথিবীর কক্ষপথে জায়গা করে নেয়, সেই পুরো প্রক্রিয়া প্রত্যক্ষ করার সুযোগ কখনও বিজ্ঞানীদের কাছে আসেনি। তবে এবার হয়তো সেই ঘটনার সাক্ষী থাকবেন তাঁরা। সম্প্রতি একটি মহাজাগতিক বস্তুর সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা, এবং সেটা আগামী অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যেই পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ ক্ষেত্রের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে।
সৌরজগতে নতুন সন্ধান পাওয়া এই বস্তুটির নাম রাখা হয়েছে ২০২০ এসও। এপ্রিল মাস নাগাদ এই বস্তুটির অস্তিত্বের কথা জানা যায়। তারপর পর্যবেক্ষণে দেখা যায় সেটি পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ ক্ষেত্রের দিকে এগিয়ে আসছে। নাসার সেন্টার ফর নিয়ার আর্থ অবজেক্ট স্টাডিজ-এর কর্ণধার পিল কোদাস অবশ্য মনে করছেন এটি কোনো মহাজাগতিক বস্তু নাও হতে পারে। সম্ভবত এর জন্ম পৃথিবীতেই। ৬০-এর দশকের ইতিহাস থেকে ফিরে আসছে এই মহাজাগতিক বর্জ্যটি।
পল দেখিয়েছেন এই বস্তুটি সূর্যের চারিদিকে যে কক্ষপথে ঘুরছে তার ব্যাস প্রায় পৃথিবীর সমান। অন্য কোনো উল্কার ক্ষেত্রে যে ঘটনা প্রায় সম্ভব নয়। একমাত্র পৃথিবী থেকে উৎক্ষেপিত কোনো পদার্থের ক্ষেত্রেই এমনটা হতে পারে। তাছাড়া যেকোনো মহাজাগতিক বস্তুর থেকে এর গতিবেগও অনেক কম। পলের মতে ষাটের দশকে যখন আমেরিকা এবং রাশিয়ার মধ্যে ঠাণ্ডা লড়াই চলছিল তখন চাঁদের মাটিতে পা রাখার জন্য দুই দেশের একাধিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। তেমনই একটি ব্যর্থ উৎক্ষেপণ ছিল সার্ভেয়ার ২। চাঁদের মাটিতে পা রাখার কিছু আগেই তার সঙ্গে বিজ্ঞানীদের সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। সম্ভবত সেটা মহাকাশের বুকেই হারিয়ে গিয়েছিল। প্রায় ৬ দশক পর সেই মহাকাশযান ফিরে আসছে পৃথিবীর উপগ্রহ হয়ে।
অক্টোবরের মধ্যে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ ক্ষেত্রের মধ্যে প্রবেশ করলেও যথেষ্ট কাছাকাছি আসতে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সময় লেগে যাবে বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। আবার ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই ক্রমশ দূরে সরে যাবে। মোটামুটি ২০২১ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত পৃথিবীর কক্ষপথে অবস্থান করবে ২০২০ এসও। আগন্তুককে ঘিরে যে বিজ্ঞানীদের উৎসাহের শেষ নেই, সেকথা বলাই বাহুল্য।
Powered by Froala Editor