নিজের নিয়মেই সেরে উঠল ওজন স্তরের গহ্বর, দ্রুত আরোগ্যে অবাক বিজ্ঞানীরা

প্রকৃতির কোনো চিকিৎসক নেই। প্রকৃতি নিজেই নিজের চিকিৎসা করে। নানা বিপর্যয়ের মুখে পড়েও আবার সুস্থ হয়ে ওঠে প্রকৃতি। মাঝে মাঝে এমন ঘটনা বিজ্ঞানীদেরও আশ্চর্য করে। ঠিক এমনই ঘটনার সাক্ষী থাকল চলতি বছর। মাত্র মাসখানেক আগে বিজ্ঞানীদের নজরে এসেছিল উত্তর মেরুর উপর ওজন স্তরে এক বিরাট গহ্বর। এই গহ্বরের আয়তন ছিল প্রায় এক মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার। আর দক্ষিণগামী বাতাসের স্রোতে তা ক্রমশ সরে আসছিল সাইবেরিয়া অঞ্চলের দিকে। ওজন স্তরের মধ্যে এই বিরাট ক্ষত পরিবেশবিদদের কাছে রীতিমতো আশঙ্কার কারণ হয়ে উঠেছিল। অথচ মাস ঘুরতে না ঘুরতেই সেই ক্ষত সেরে উঠেছে। কোপারনিকাস অ্যাটমস্ফিয়ার মনিটরিং সার্ভিসের বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেছেন, উত্তর মেরুর উপর বায়ুমণ্ডলের ওজন স্তরে আর কোনো ছিদ্র নেই।

সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ভয়ে কার্যত লকডাউন চলছে সারা পৃথিবীতে। আর এর ফলে কমে এসেছে দূষণের পরিমাণও। প্রকৃতির অনেক দূরারোগ্য ক্ষত সেরে উঠছে এভাবেই। তবে ওজন স্তরের ক্ষতের সঙ্গে লকডাউনের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে এত তাড়াতাড়ি কীভাবে সেরে উঠল এই ক্ষত? সেই উত্তরও দিয়েছেন কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের বিজ্ঞানীরা। তাঁরা দেখিয়েছেন বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরে আচমকা উষ্ণ বাতাসের ঝড়ে বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছিল ওজন স্তর। তবে এই ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই দক্ষিণ দিক থেকে অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা বাতাসের স্রোত ছুটে আসে উত্তর মেরুর দিকে। আর এর ফলেই চরম বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে ওজন স্তর। তবে উষ্ণ বাতাসের ঝড় এখনও থেমে যায়নি। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে এর থেকে আবার এমন বিপদের সম্ভবনা নেই বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

অক্সিজেনের একটি অন্য রূপের অণু ওজন গ্যাস। বায়ুমণ্ডলের মধ্যে এই গ্যাসের স্তরটি সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি এবং অন্যান্য নানা ক্ষতিকর মহাজাগতিক রশ্মির হাত থেকে রক্ষা করে জীবজগৎকে। তবে ক্রমাগত পরিবেশ দূষণের কারণে ফাটল ধরছে এই স্তরে। দক্ষিণ মেরুর উপর এক বিরাট গহ্বর আজও বিজ্ঞানীদের কাছে চিন্তার বিষয়। ওজন স্তরকে বিপদের হাত থেকে রক্ষার জন্য ১৯৮৭ সালে মন্ট্রিল নীতির মাধ্যমে ক্লোরো-ফ্লুরো-কার্বনের ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ করা হয়েছে। তবে ক্রমাগত বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলেও কি বিপদে পড়ছে না ওজন গ্যাসের স্তর? অবশ্য এ-বিষয়ে এখনও একমত নন বিজ্ঞানীরা।

Latest News See More