২০১৪ সালে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমান ৩৭০ হারিয়ে গিয়েছিল আকাশেই। সারা পৃথিবী জুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছিল এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে। অবশ্য বিশ্বের বিমান চলাচলের ইতিহাসে এই ঘটনা প্রথম নয়। এর আগেও বহু যাত্রীবাহী বিমান হারিয়ে গিয়েছে আকাশেই। কোথাও তাদের কোনো ভগ্নাংশ বা যাত্রীদের মৃতদেহ কিছুই খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিমান চলাচলের প্রথম যুগ সেটা। তখনকারই পাঁচটি হারিয়ে যাওয়া বিমানের কথা রইল প্রহরে -
এল'ওয়সিউ ব্ল্যাঙ্ক, 8 মে ১৯২৭
ফ্রান্সের দুই অভিযাত্রী রওনা হয়েছিলেন প্যারিসের লে বুরগেট থেকে। উদ্দেশ্য ছিল বিনাবিশ্রামে আটলান্টিক মহাসাগর পার হয়ে যাওয়া। ৪২ ঘণ্টা পর তাদের নিউইয়র্কে অবতরণের কথা ছিল। নিউইয়র্কে মানুষ ভিড় করে দাঁড়িয়ে ছিল বিরল এই অভিযানের সাক্ষী হতে। কিন্তু নিউইয়র্কের মাটি স্পর্শ করল না এল'ওয়সিউ ব্ল্যাঙ্ক। বিমানের কোনো চিহ্ন খুঁজে পায়নি সন্ধানকারী দল।
কুয়েত্রো ভিয়েন্তস, ২০ জুন ১৯৩৩
স্পেন থেকে উড়ান দেওয়ার পর আটলান্টিক মহাসাগর অতিক্রম করে হাভানা দ্বীপে পৌঁছেছিল এই বিমান। তারপর সেখান থেকে মেক্সিকো যাওয়ার কথা ছিল। দূরত্ব বেশি নয়। কিন্তু এর মধ্যেই হঠাৎ আকাশ থেকে হারিয়ে গেল বিমানটি। কোথাও তার কোনো চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়নি কোনোদিন।
লকহিড ইলেকট্রা ১০ই স্পেশাল, ২ জুলাই ১৯৩৭
অ্যামেলিয়া আরহার্ট বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম মহিলা পাইলট, যিনি একা বিমান নিয়ে রওনা হওয়ার সাহস দেখিয়েছিলেন। এর আগে অনেক রেকর্ড তৈরি করেছিলেন তিনি। কিন্তু অভিযাত্রী মন সবসময় আরো বড়ো সাফল্যের দিকে এগিয়ে যেতে চায়। অ্যামেলিয়া চাইলেন একবার গোটা পৃথিবী ঘুরে আসতে। মিয়ামি থেকে উত্তরণের পর নিউ গিনি পর্যন্ত সফলভাবে পৌঁছে গেলেন তিনি। কিন্তু প্রশান্ত মহাসাগরে পৌঁছতেই প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে পড়লেন। রাডারের মাধ্যমে আর যোগাযোগ রাখা গেল না। হওয়াই দ্বীপে পৌঁছানোর আগেই হারিয়ে গেল ইলেকট্রা।
হাওয়াই ক্লিপার, ২৮ জুলাই ১৯৩৮
এটি কোনো অভিযাত্রী বিমান নয়। সেইসময় সবচেয়ে বিলাসবহুল যাত্রী বিমান হাওয়াই ক্লিপার, ছজন যাত্রী নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ম্যানিলার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল। যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাবিদ্যার ডিন ডক্টর আর্ল ম্যাকেনলি, উদ্ভিদবিদ্যার অধ্যাপক ডক্টর ফ্রেড মিয়েরের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। সকাল ১১:৩৯ এ গুয়াম থেকে শেষবারের জন্য আকাশে উড়ান দেয় হওয়াই ক্লিপার। এরপরেই ম্যানিলা পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু সমস্ত যাত্রীদের নিয়ে আকাশেই হারিয়ে যায় বিলাসবহুল বিমানটি।
জি-এএজিএক্স হ্যানিবা ১, ১ মার্চ ১৯৪০
তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। RAFএর বিশেষ কাজের জন্য ব্যবহৃত হত এই বিমান। আটজন ব্রিটিশ সামরিক যাত্রীকে নিয়ে করাচি থেকে ইজিপ্টের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল হ্যানিবা। কিন্তু ওমন উপসাগর অতিক্রম করার পরেই রাডারের সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তারপর আর খুঁজে পাওয়া যায়নি বিমানটিকে।