মৃত্যুহার ৭৪০,০০০। যা কিনা করোনার থেকেও বেশি? ল্যানসেটের প্ল্যানেটারি হেলথ জার্নালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা বলছে, প্রতিবছর ভারতে গড়ে মারা যাচ্ছেন প্রায় ৭৪০,০০০-এর বেশি মানুষ। তাহলে কি নতুন কোনো ভাইরাসের আগমন ঘটল? না। এই সমীক্ষা, কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে মূলত বিশ্ব-উষ্ণায়নকে (Global Warming)।
দেখা গিয়েছে, পৃথিবীজুড়ে আকস্মিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও হ্রাসের কারণে প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি রিসার্চ-টিমের এই সমীক্ষাটি প্রকাশিত হয় গতবছর জুন মাসে। গবেষকদের মতে সাধারণত, প্রচণ্ড ঠান্ডার জন্যই মৃত্যু ঘটে বেশি। ভারত এর ব্যতিক্রম নয়। যেমন, ভারতে প্রতিবছর নিম্ন তাপমাত্রার কারণে গড়ে মারা যান প্রায় ৬,৫৫,৪০০ মানুষ। অথচ তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের থেকে কয়েক ডিগ্রি চড়লে, গড়ে মৃত্যু ঘটে ৮৩,৭০০ মানুষের। কিন্তু এই ছবিটাও পাল্টাতে শুরু করেছে - এমনটাই দাবি করছেন গবেষকরা।
২০০০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৪৩টি দেশে তাপমাত্রা বাড়া-কমার সঙ্গে মৃত্যুহারের সম্পর্ক নিয়ে তাঁরা যে সমীক্ষাটি করেছেন, সেখানেই উঠে এসেছে কিছু ভয়ঙ্কর তথ্য। গত দু-দশকে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ছিল শিল্পবিপ্লবের সময়কালে চেয়েও বেশি। প্রতিদশকে তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় ০.২৬ সেলসিয়াস করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কমেছে, নিম্ন তাপমাত্রার কারণে মৃত্যুহার। কিন্তু ভয়ের কথা এই যে, পারদ যেমন উঠছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গরমের কারণে মৃত্যু।
মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইয়ুমিং গুয়োর মতে, বিশ্ব-উষ্ণায়নের কারণে খুব দ্রুত পাল্টাচ্ছে জলবায়ু। ফলে, বিভিন্ন দেশে তাপমাত্রার হেরফের ঘটছে মারাত্বক। আগামী কয়েক দশকে আরো চড়তে পারে পারদ। এবং অস্বাভাবিক গরমে মৃত্যুহার বাড়বে ভারতের মতো দেশগুলিতে।
পর্যাপ্ত প্রতিষেধকের সাহায্যে অতিমারীকে যে অপেক্ষাকৃত সহজে নিয়ন্ত্রণে আনা যায় - এমন ছবিই গতবছরে দেখেছে বিশ্ব। কিন্তু উষ্ণায়নকে নিয়ন্ত্রণে আনা সহজ কাজ নয়। কয়েকশো বছরের লাগামছাড়া দূষণের জন্যে, বর্তমানে ধুঁকছে পৃথিবী। ফলে মারণ ভাইরাসের চেয়েও ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে তাপমাত্রা বৃদ্ধির এই প্রভাব।
Powered by Froala Editor