ভূগর্ভস্থ জল নিষ্কাশনেই বিপদ বাড়ছে ভারতের?

কয়েকদিন আগের কথা। ধ্বসের কারণে পরিত্যক্ত হয়েছিল জোশীমঠ। অপরিকল্পিত নগরায়ন, নির্মাণ ছাড়াও, এই ধ্বসের অন্যতম কারণ হল নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ভূগর্ভস্থ জলের উত্তোলন। ক্রমাগত ভূগর্ভস্থ জল নিষ্কাশনের কারণে ফাঁপা হয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর অভ্যন্তর। আর সেই কারণে বসে যাচ্ছে ভূপৃষ্ঠ। দেখা দিচ্ছে ধ্বস। শুধু জোশীমঠই নয়, ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলনের কারণে ‘সিঙ্কহোল’-এ পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে ভারতের একাধিক অঞ্চলেই। কিন্তু এই বিপর্যয়ের সমাধান কী?

এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যাক একটা গল্পের মধ্যে দিয়েই। দিল্লির (Delhi) গা লাগোয়া ছোট্ট শহর দ্বারকা (Dwarka)। নব্বই-এর দশকে সামান্য কিছু মানুষ বসবাস করত এই অঞ্চলে। তবে বিমানবন্দর কাছাকাছি হওয়ার কারণে, নব্বই-এর দশকের শেষ থেকে ক্রমশ বাড়তে থাকে এই শহরের জনসংখ্যা। তবে জনসংখ্যা বাড়লেও, পাল্লা দিয়ে একই হারে তৈরি হয়নি পরিকাঠামো। পানীয় জলের অভাব মেটাতে তাই ঘরে ঘরে বসানো হয় টিউব ওয়েল বা বোরওয়েল। ভূগর্ভস্থ জলই হয়ে ওঠে তেষ্টা মেটানোর একমাত্র উপায়। 

তবে বোরওয়েলের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার যে এই শহরের মৃত্যু ডেকে আনছে, তা প্রকাশ্যে আসে আরও এক দশক পর। ২০০৪ সাল সেটা। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় উঠে আসে মাত্র দু’দশকে গোটা অঞ্চলটা বসে গেছে ৩.৫ সেন্টিমিটার বা ১.৪ ইঞ্চি। আর তার কারণ মাত্রাতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলন। উল্লেখ্য, দিল্লির সরকারি নথিতেও উল্লেখিত হয়েছিল এই রিপোর্টের কথা। 

এর ঠিক পর পরই সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নেয় আঞ্চলিক প্রশাসন। প্রথমত বোরওয়েলের ব্যবহার কমাতে পানীয় জলের ট্যাঙ্ক মোতায়েন করে সরকার। তাছাড়াও পানীয় জলের পাইপ বসানোর কাজ শুরু হয় গোটা শহরজুড়ে। পরবর্তী পদক্ষেপ হিসাবে ২০১৪ সালের পর সম্পূর্ণভাবে বোরওয়েল নিষিদ্ধ করা হয় গোটা অঞ্চলে। এমনকি জানানো হয়, বোরওয়েলের ব্যবহারে জরিমানাও দিতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারীদের। একইসঙ্গে গোটা অঞ্চলে স্থাপন করে করা পানীয় জলের পাইপ। পাশাপাশি শহরের একাধিক স্থানে গড়ে ওঠে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ কেন্দ্র। 

হ্যাঁ, সরকারের এই পদক্ষেপই ভাগ্য ফিরিয়েছে দ্বারকার। সাম্প্রতিক স্যাটেলাইট ট্র্যাকিং-এর বিশ্লেষণ জানাচ্ছে দিল্লির একাধিক অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ জলের স্তর কমতে থাকলেও, উল্টো ঘটনা দেখা গেছে দ্বারকাতে। বৃষ্টির জল সংরক্ষণ এবং বোরওয়েল নিষিদ্ধ করার কারণেই ভূগর্ভস্থ জলের তল বৃদ্ধি পেয়েছে সেখানে। খানিকটা হলেও উঠেছে ভূমিতলও। তবে দ্বারকা বিপদমুক্ত হলেও, আশঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে দিল্লির ৩৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা। ভূগর্ভস্থ জল নিষ্কাশনের কারণে সিঙ্কহোল তৈরির প্রবণতা সেখানে সর্বোচ্চ। দ্বারকার নগর পরিকল্পনাকে মডেল হিসাবে গোটা ভারতে চালু করা হলে এই সমস্যার সমাধান মিলবে বলেই আশাবাদী গবেষকরা…

Powered by Froala Editor