শতাধিক মানুষকে ‘আত্মহত্যার ওষুধ’ দিয়েছেন এই ডাচ মনোবিদ!

একজন, দু’জন নয়। শতাধিক মানুষের হাতে তিনি তুলে দিয়েছিলেন ‘সুইসাইড পাউডার’ (Suicide Powder)। আত্মহত্যার রসদ। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে নিজে মুখে এই কর্মকাণ্ডের কথা স্বীকার করে নেদারল্যান্ডসের (Netherlands) আত্মহত্যা সংক্রান্ত আইন সম্পর্কে বিতর্ক উসকে দিলেন ডাচ মনোবিদ উইম ভ্যান ডাইক (Wim Van Dijk)। বহু মানুষকে আত্মহননের প্ররোচনা দেওয়ার জন্য সম্প্রতি গ্রেপ্তারও হতে হয়েছে তাঁকে। 

আত্মহত্যায় কাউকে প্ররোচনা দেওয়া তো বটেই, এমনকি আত্মহত্যার চেষ্টা করাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ, তা সকলেরই জানা। তবে নতুন করে বিতর্কের প্রসঙ্গ উঠছে কেন নেদারল্যান্ডসের এই ঘটনা ঘিরে? না, ভারত আর হল্যান্ডের আইন এক নয়। আজ থেকে বছর কুড়ি আগের কথা। ২০০০ সালে নেদারল্যান্ডসে পাশ হয়েছিল একটি বিশেষ আইন। এককথায় স্বেচ্ছামৃত্যুর ইচ্ছেয় সই করেছিল ডাচ সরকার। জানানো হয়েছিল, কোনো রোগীর শারীরিক অবস্থার উন্নতির সম্ভাবনা না থাকলে কিংবা তাঁর অসহনীয় বা আশাহীন মনে হলে, তাঁর স্বেচ্ছামৃত্যুতে সাহায্য করতে পারেন চিকিৎসকরা। 

ডাচ আইনের ঠিক এই জায়গাটাতেই দানা বাঁধছে বিতর্ক। আত্মহত্যায় মদত করাটা আইনত অপরাধ না হলে, আত্মহত্যা সম্পর্কে উপদেশ দেওয়া অপরাধের আওতায় পড়ে কীভাবে? সংবাদমাধ্যমের সামনে এই প্রশ্নই তুলে ধরেছেন ৭৮ বছর বয়সি ডাচ মনোবিদ। হাজতবাস পর্যন্ত হতে পারে জেনেও, প্রকাশ্যে এনেছেন তাঁর কর্মকাণ্ডের কথা। ভ্যান ডাইকের মতামত, এই বিষয়টি নিয়ে চর্চা গড়ে উঠুক রাষ্ট্রীয় স্তরে। যাতে এই দ্বৈততা প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থার চোখে পড়ে। 


আরও পড়ুন
আত্মহত্যার চিন্তা সরিয়ে অন্যদেরও বাঁচার মন্ত্র দিচ্ছেন মনীষা

বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই, ‘লাস্ট উইল কোঅপারেটিভ’ নামের একটি সংস্থার সঙ্গে জড়িত ভ্যান ডাইক। যাঁরা আত্মহত্যা করতে ইচ্ছুক, তাঁদের স্বেচ্ছামৃত্যুর পথ দেখায় এই সংস্থাটি। ইতিমধ্যেই এই সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং তদন্তে প্রমাণও উঠে এসেছে বহু মানুষকে আত্মহত্যার জন্য ‘এজেন্ট এক্স’-নামের একটি প্রাণঘাতী ওষুধ প্রদান করেছেন এই সংস্থার সদস্যরা। তাঁদের সহায়তার মৃত্যুও হয়েছে বেশ কিছু মানুষের। 

আরও পড়ুন
সৌরভ-ঋদ্ধিমানের সতীর্থ, অবসাদে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন এই বঙ্গ ক্রিকেটার!

গত জুলাই মাসে আইন্ডহোভেন থেকে ২৮ বছর বয়সি অ্যালেক্স এস নামের এক ব্যক্তিতে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল ‘সুইসাইড পাউডার’ বিক্রি করার জন্য। তিনিও সদস্য ছিলেন ‘লাস্ট উইল কোঅপারেটিভ’-এর। তারপর থেকেই ক্রমশ দানা বাঁধছিল জল্পনা। এবার প্রকাশ্যে কর্মকাণ্ডের কথা স্বীকার করে যেন সেই বিতর্কে ঘৃতাহুতি দিলেন ভ্যান ডাইক। 

আরও পড়ুন
ম্যাকফি অ্যান্টিভাইরাসের স্রষ্টার আত্মহত্যা, নেপথ্যে কোন রহস্য?

চিকিৎসক না হওয়া সত্ত্বেও আত্মহত্যায় সহায়তা করার জন্য তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হতে পারে ভ্যান ডাইকের। তবে আদালতে দাঁড়িয়েও তিনি সমর্থন জানিয়েছেন আত্মহত্যার পক্ষেই। জানিয়েছেন পাঁচ বছর আগে তাঁর স্ত্রী ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিলুপ্ত হয়ে প্রয়াত হওয়ার পর, বাস্তব পরিস্থিতিকে প্রত্যক্ষ করেই এই সংস্থার সদস্যপদ গ্রহণ করেন তিনি। 

শেষ পর্যন্ত তাঁকে অপরাধীর তকমা দেওয়া হবে কিনা, তা নির্ধারণ করবে নেদারল্যান্ডসের বিচার ব্যবস্থা। আত্মহত্যায় সহায়তা করা উচিত কি অনুচিত, তা নিয়েও চলতে পারে বিতর্ক। তবে একথা অস্বীকার করার কোনো জায়গা নেই, আত্মহত্যা সংক্রান্ত ডাচ আইনের মধ্যেও ফাঁক রয়েছে অনেক। রয়েছে দ্বিচারিতাও…

Powered by Froala Editor