বর্ধমান বললেই আমাদের মাথায় আসে সীতাভোগ-মিহিদানা। শুধু কি তাই? হাইওয়ের ধারে সার দিয়ে দাঁড়ানো শক্তিগড়ের বিখ্যাত ল্যাংচাও রয়েছে সেই তালিকায়। সেইরকমই একটি অতি পরিচিত জিনিসের সঙ্গে যুক্ত বর্ধমান। কাঠের পুতুল। বর্ধমানের নতুনগ্রামের এই পুতুল আজ থেকে নয়, বহু বছর ধরে বাংলার সংস্কৃতির অন্যতম অঙ্গ হয়ে গেছে। এবার একেই জিআই ট্যাগ দেওয়ার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
আজ যেখানে নতুনগ্রাম, সেখানে একসময় ছিল ঘন জঙ্গল। একদল কাঠুরে এসে পরে সেখানে একটি গ্রাম গড়ে তোলেন। নাম হয় ‘নতুনগ্রাম’। সেখানেই থাকতে লাগলেন সূত্রধর গোষ্ঠীর লোকেরা। সেই সময় নতুনগ্রামের আশেপাশে বেশ কিছু জায়গায় মূর্তি বানানো হত। সেখান থেকেই নিজেদের মধ্যে প্রথম মূর্তি গড়া শুরু করেন সূত্রধররা। তবে মাটির নয়, কাঠের। গৌর-নিতাই, দেব দেবী, জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রা তো আছেই, সেই সঙ্গে তৈরি করেন প্যাঁচার মূর্তি। যা নতুনগ্রামকে এক অন্য পরিচিতি দেয়। বাংলার লোকসংস্কৃতিকে এইভাবেই নিজেদের মতো করে তৈরি করতে থাকেন সূত্রধররা। তবে আজকাল শুধু মূর্তি তৈরিতেই আটকে নেই নতুনগ্রাম। জীবিকার প্রয়োজনে কাঠের আসবাবও তৈরি করছেন এখানকার শিল্পীরা। সেখানেও ছুঁয়ে যাচ্ছে নতুনত্ব। তবে যাই আসুক না কেন, ঐতিহ্যশালী পুতুল তৈরি বন্ধ হয়নি।
স্বাধীনতার পর এখানকার শিল্প ছড়াতে থাকে গোটা ভারতে। গোটা দেশে পরিচিতি পায় এখানকার কাজ। রাষ্ট্রপতি পুরস্কারও পান এখানকার শিল্পীরা। আজও বাংলার প্রতিটি মেলায়, শিল্প প্রদর্শনীতে জায়গা করে নেয় নতুনগ্রামের কাঠের পুতুল। প্রায় প্রতিটি ঘরেই দেখা যায় এখানকার কাঠের প্যাঁচা। ইদানিং থিম পুজো এবং বিভিন্ন উৎসব পার্বণের ভিড়ে এর চাহিদা আরও বেড়েছে। অন্যান্য মূর্তির তুলনায় অনেক হালকা হওয়া সত্ত্বেও এক টুকরো লোকশিল্প যেন উঠে আসে এখানে। আর তাকেই স্বীকৃতি জানানোর উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। এর পাশাপাশি শক্তিগড়ের ল্যাংচা ও খণ্ডঘোষের ফেজ টুপিও এই তালিকায় রয়েছে। শীঘ্রই যাবতীয় প্রক্রিয়া, নথি সংগ্রহ শুরু হবে। এখন, গোটা বর্ধমান জিআই স্বীকৃতির অপেক্ষায়। অপেক্ষায় নতুনগ্রামের শিল্পীরাও।