মহালয়ের আগেই শুরু হয়ে যায় দুর্গাপুজো। এ যেন অকালবোধনেরও অকালবোধন। আজ ৪০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই ব্যবস্থাই চলে আসছে ঝাড়গ্রামের রাজপরিবারে। আর সেই ঐতিহাসিক পুজো আরও এক ইতিহাস তৈরি করল এবছর। এবছর দুর্গাপুজো চলবে একটানা দেড় মাস। সম্ভবত এই প্রথম এতদিন ধরে চলবে দুর্গাপুজো। গত শুক্রবার থেকে পুজো শুরু হয়েও গিয়েছে।
ঝাড়গ্রামের প্রাচীন রাজপরিবার মল্লদেবদের পারিবারিক নথি বলছে পুজোর সূত্রপাত ১০১৬ বঙ্গাব্দে। অর্থাৎ এবছর ৪১২ বছরে পা দিল এই পুজো। শোনা যায় তখন স্থানীয় মাল রাজাদের পরাস্ত করে এলাকার দখল নেন রাজপুতানার সর্বেশ্বর। তাঁরই হাতে এই পুজোর প্রতিষ্ঠা। যদিও পরিবারের কুলদেবী সাবিত্রীর মন্দিরে নিত্যপুজো হয়, পাশাপাশি পটে আঁকা দুর্গাপুজোর প্রচলনও চলে আসছে। কয়েকশো বছর আগে নাকি শালপাতার ঝালরের উপর আঁকা ছিল দেবীপ্রতিমা। এখন সেই ঝালর নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তার পরিবর্তে চণ্ডীমণ্ডপের দেয়ালে আঁকা হয়েছে বর্তমান প্রতিকৃতি।
নিয়ম অনুযায়ী প্রতি মহালয়ার আগে জিতাষ্টমীর দিন হয় দেবীর আদিবাস। নবমীর দিন থেকে শুরু হয় পূজার্চনা। চলে ঠিক মহাষ্টমীর দিন পর্যন্ত। অর্থাৎ সব মিলিয়ে ১৫ দিন মতো। কিন্তু এবছর আশ্বিন মাস মলমাস হওয়ায় মহাষ্টমীর দিন পড়েছে কার্তিক মাসে। ফলে পুজো চলবে টানা দেড়মাস। এই কয়েকদিন ধরে চণ্ডীপাঠের পাশাপাশি চলবে দৈনিক হোম-যজ্ঞ। পরিবারের বর্তমান দুই কর্তা দুর্গেশ মল্লদেব ও জয়দীপ মল্লদেব বলেন রাজপরিবারে এমন ঘটনা এই প্রথম।
তবে ঠিক কী কারণে এই অসময়ে পুজোর প্রচলন শুরু হয় সেকথা স্পষ্ট জানা যায় না। অনেকের মতে রাজা সর্বেশ্বরের জয়লাভের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতেই কৃষ্ণপক্ষের দ্বাদশী তিথিতে শুরু হয় ইন্দ্রাভিষেক। আর তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই শুরু হয় এই অকাল পুজো। আবার লোক-সংস্কৃতি গবেষক সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ক্ষাত্রতেজ প্রদর্শন করতেই এই নিয়ম চালু হয়। চার শতকের সেইসব প্রাচীন ইতিহাস এখন আর পরিবারের মানুষদেরও মনে নেই। ইতিহাস হারিয়ে গিয়েছে। শুধু থেকে গিয়েছে এক আবহমান রীতি। জঙ্গল শহরের এই প্রাচীনতম দুর্গাপুজো যে আরেক ইতিহাসের সাক্ষী থাকল, সে ঘটনা অবশ্য নথিভুক্ত হয়ে থাকল।
আরও পড়ুন
দুর্গাপুজো হোক ডিসেম্বরে, করোনা-পরিস্থিতিতে প্রস্তাব নেট নাগরিকদের একাংশের
Powered by Froala Editor