এক ক্লিকেই ঠাকুর দেখা, আজ কলকাতার বনেদি বাড়ির পুজো

১। শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজো – বড় তরফ

১৭৫৭ সালে রাজা নবকৃষ্ণ দেবের হাতে শুরু এই পুজো এইবছর ২২৯ বছরে পদার্পণ করল। রাজা নবকৃষ্ণ দেব তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র গোপীমোহন দেবকে পুত্র হিসেবে দত্তক নেন ৷ পরে নিজের ছেলেকে নিয়ে আদি বাড়ির দক্ষিণ দিকে আরও একটি ভবন তৈরি করে বসবাস শুরু করেন ৷ নবকৃষ্ণ দেবের মৃত্যুর পর শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজো বড় তরফ ও ছোট তরফ, এই দু’ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে৷ আদি বাড়ির পুজো ‘বড় তরফের পুজো’ নামেই পরিচিত।

আরও দেখুন
উত্তর কলকাতার পুজো

২। শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজো – ছোট তরফ

আদি বাড়ি থেকে আলাদা হয়ে ছোট তরফের পুজো শুরু হলেও, আচার-আচরণ, অনুষ্ঠান যা মূল রাজবাড়িতে শুরু হয়েছিল, আজও তা একই৷ উল্টো রথের দিন কাঠামো পুজো দিয়ে শুরু হয় দেবীর মূর্তি তৈরির কাজ। রাজবাড়িতেই চলে প্রতিমা নির্মাণ। দশমীর দিন রীতি অনুযায়ী মাটির তৈরি নীলকণ্ঠ পাখি গঙ্গাতে ভাসানো হয়।

আরও দেখুন
দক্ষিণ কলকাতার পুজো

৩। দর্জিপাড়ার মিত্র বাড়ির পুজো

১৯ সি, নীলমণি মিত্র স্ট্রিট। প্রায় ২১০ বছর আগে নীলমণি মিত্রের নাতি রাধাকৃষ্ণ মিত্রের হাত ধরে এখানে শুরু হয় দুর্গাপূজা। এখানে মেয়ে রূপেই পূজিত হন দুর্গা। তিনচালা প্রতিমা, পিছনে মঠচৌড়ি। পদ্ম নয়, ১০৮টি অপরাজিতা ফুলে সন্ধিপুজো হয় মিত্র বাড়িতে।

আরও দেখুন
পূর্ব কলকাতার পুজো

৪। পাথুরিঘাটার ঘোষ বাড়ির পুজো

বিধান সরণির বিদ্যাসাগর কলেজের প্রায় পাশেই পাথুরিঘাটার খেলাত ঘোষেদের বাড়ি। পাথুরিঘাটা ঘোষ বংশের প্রতিষ্ঠাতা রামলোচন ঘোষ। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষদিকে তিনি বাড়িতে দুর্গাপূজা শুরু করেন। তাঁর তিন পুত্র শিব নারায়ণ, দেব নারায়ণ, আনন্দ নারায়ণ। ১৮৪৬ সাল নাগাদ দেবনারায়ণের পুত্র খেলাৎ ঘোষ পুরোনো বাড়ির পাশেই নতুন বাড়িতে চলে যান, সেখানেই পুজো শুরু করেন। মার্টিন বার্ন কোম্পানির তৈরি এই বাড়িতে মঠচৌড়ি চালায় দেবী প্রতিমার পুজো হয়। দশমীর দিন তিনটে নৌকো করে দেবীর নিরঞ্জন হয় গঙ্গায়।

আরও দেখুন
বেহালার পুজো

৫। জানবাজারে রানী রাসমণির বাড়ির পুজো

কলকাতার চৌরঙ্গী থেকে হাঁটা দূরত্বে জানবাজার। ১৭৯০ সালে রানি রাসমণির শ্বশুর প্রীতিরাম দাস এখানেই পুজো শুরু করেন । প্রীতিরাম দাসের মৃত‍্যুর পর এই পুজোর দায়িত্ব নেন রাসমণির স্বামী বাবু রাজচন্দ্র। স্বামীর মৃত‍্যুর পর ১৮৩৯ সাল থেকে এই পুজোর দায়িত্ব গ্রহণ করেন রানি রাসমণি। এখন যদিও এই বাড়ির পুজো ভেঙে তিন টুকরো। রানির ছেলে না থাকায় মেয়ে জামাইয়ের মধ‍্যে পুজো ভাগ হয়ে যায়। এখানকার বিশেষত্ব হল - এখানে অন্নভোগ হয় না, হয় লুচি ও মিষ্টান্ন ভোগ।

৬। জোড়াসাঁকোয় শিবকৃষ্ণ দাঁ বাড়ির পুজো

জোড়াসাঁকোর দাঁ বাড়িতে পুজোর শুরু হয় ১৮৪০ সালে। গোকুলচন্দ্র দাঁ-এর পুত্র শিবকৃষ্ণ দাঁ -এর হাতে পুজোর শুরু। শিবকৃষ্ণ ছিলেন সেই সময়ের নামজাদা ব‍্যবসায়ী। দাঁ বাড়িতে পুজো হয় বৈষ্ণব রীতি মেনে। কথিত আছে, মা দুর্গা এই বাড়িতে এসেই গয়না পরেন। পরিবার সূত্রে জানা যায়, মা দুর্গাকে সাজানোর জন‍্য প‍্যারিস ও জার্মানি থেকে হীরে ও চুনি বসানো গয়না আনাতেন শিবকৃষ্ণ। এই পুজো এক সময়ে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে পাল্লা দিত। বিসর্জন নিয়ে দুই বাড়ির রেষারেষি বহু চর্চিত।

৭। জোড়াসাঁকোর নরসিংহ দাঁ বাড়ির দুর্গাপুজো

প্রাচীন বন্দুক ব‍্যবসায় যুক্ত এই পরিবারের পুজো আনুমানিক ১৫০ বছরের পুরোনো। প্রচলিত কথা অনুযায়ী দেবী দুর্গা স্বয়ং আসেন এই বাড়িতে। কন‍্যারূপে পূজিত দেবীর সঙ্গে এখানে থাকেন জোড়া কার্তিক। সন্ধিপুজোয় কামান দাগার রেওয়াজ আছে এখনও। বিসর্জনের আগে দেওয়া হয় গানস‍্যালুট।

৮। হাতিবাগানের কুণ্ডু বাড়ির দুর্গাপুজো

প্রায় ১৩০ বছরের পুরনো উত্তর কলকাতার এই পুজো। এখানে সিংহ নয়, দেবী অধিষ্ঠান করেন বাঘের ওপরে। প্রসঙ্গত, এ-বাড়ির বর্তমান প্রজন্মের জয়দীপ কুণ্ডু ও তাঁর স্ত্রী সুচন্দ্রা কুণ্ডু দুজনেই ব্যাঘ্র সংরক্ষণ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। তাই বছর দশেক আগে তাঁরা শুরু করেন ‘ব্যাঘ্রবাহিনী দুর্গা’র পুজো।  

More From Author See More

Latest News See More