উৎসব হিসাবে বয়স খুব পুরনো নয়। তবু বাঙালির সবচেয়ে বড়ো উৎসব যে দুর্গাপুজো (Durga Puja), তাতে সন্দেহ নেই। সর্বভারতীয় স্তরের নানা উৎসবের সঙ্গেই পাল্লা দিতে পারে দুর্গাপুজোর জৌলুস। আর এবার তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল আন্তর্জাতিক স্তরেও। আজ দুপুরে জাতিপুঞ্জের সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কোর (UNESCO) তরফ থেকে ‘অতুলনীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’-এর স্বীকৃতি পেল দুর্গাপুজো। সংস্থার তরফ থেকে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, দুর্গাপুজোর সময় বাঙালির অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় সমস্ত বিভাজনও মুছে যায়। এমন উৎসব সত্যিই বিরল।
দুর্গাপুজোকে নিয়ে বাঙালির আবেগের কথা নতুন করে উল্লেখের কোনো জায়গা নেই। আর এই আবেগকে কাজে লাগিয়ে রাজনীতির চেষ্টাও কম হয়নি। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালেই তাই দুর্গাপুজোর জন্য ইউনেস্কোর স্বীকৃতির আবেদন জানায় কেন্দ্র সরকার। পাশাপাশি রাজ্য সরকারও আবেদন জানিয়েছে একাধিকবার। অবশেষে আজ সেই স্বীকৃতি মিলল। পাশাপাশি করোনা অতিমারীর কারণে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে দেরি হয়েছে বলেও জানিয়েছে ইউনেস্কো।
এর আগে ভারতের মোট ৪টি উৎসব ইউনেস্কোর তালিকায় জায়গা পেয়েছে। তার মধ্যে ছিল পুরুলিয়ার ছৌ নাচও। এছাড়াও রয়েছে লাদাখের বৌদ্ধ আরাধনা এবং মণিপুরের সংকীর্তন। ২০১৮ সালে কুম্ভমেলাকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দেয় ইউনেস্কো। এছাড়া ইউনেস্কোর তালিকায় থাকা ‘নাভরোজ’ উৎসব ভারতীয় পার্সিদের মধ্যেও যথেষ্ট জনপ্রিয়। সেই তালিকাতেই নতুন জায়গা পেল দুর্গাপুজো। ইতিহাসের দিক থেকে অন্যান্য উৎসবগুলির চেয়ে দুর্গাপুজোর বয়স বেশ কম। বাংলায় ব্রিটিশ শাসনের আগে কয়েক জায়গায় দুর্গাপুজো হলেও তা উৎসবের চেহারা নেয়নি। তবে এই আড়াইশো বছরের মধ্যেই সমস্ত উৎসবের জৌলুসকে হারিয়ে দিয়েছে দুর্গাপুজো।
দুর্গাপুজো কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং তার চেয়ে অনেক বেশি করে সামাজিক উৎসব। সমাজের প্রভাবশালী জমিদার এবং ধনী ব্যবসায়ীদের হাত দিয়ে এই উৎসবের সূচনা হলেও বর্তমানে দুর্গাপুজো সমস্ত সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বেড়াজালের বাইরে ছড়িয়ে পড়েছে। পুজোর আয়োজন সরিয়ে রেখেও এই সময় বাঙালি নানা সামাজিক আয়োজনেও জড়িয়ে পড়ে। সব মিলিয়ে দুর্গাপুজোর পরিচয় একটি মানবিক উৎসব হিসাবেই। আর এই কারণেই দুর্গাপুজো বিশেষ ঐতিহ্যের দাবি রাখে। এমনটাই জানিয়েছে ইউনেস্কো। প্রবাসী বাঙালিদের দৌলতে ইতিমধ্যে গোটা পৃথিবীর মানুষ দুর্গাপুজোর সঙ্গে পরিচিত। ইউনেস্কোর এই স্বীকৃতি যে পুজোর মর্যাদাকে আরও বাড়িয়ে দেবে, সে-কথা বলাই বাহুল্য।
Powered by Froala Editor