গ্রিনল্যান্ডের জম্বি বরফের জেরে সমুদ্রতল বাড়বে ১০ ইঞ্চি! জানাচ্ছে গবেষণা

বিশ্ব উষ্ণায়ন আর জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে দ্রুত গলছে গ্রিনল্যান্ডের (Greenland) বরফের চাদর। তা আর নতুন কী? বিগত কয়েক বছর ধরেই চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে এই আলোচনা। তবে এবার নতুন গবেষণা শোনাল আরও আশঙ্কার কথা। গ্রিনল্যান্ড-জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে ১২০ ট্রিলিয়ন টনেরও বেশি জম্বি বরফ (Zombie Ice)! যা বিশ্বব্যাপী সমুদ্রপৃষ্ঠের মাত্রা কমপক্ষে ১০.৬ ইঞ্চি বাড়িয়ে দেবে বলেই আশঙ্কা করছেন গবেষকরা। 

সোমবার প্রকাশিত এই গবেষণাপত্রটি রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে বিজ্ঞানীমহলে। সংশ্লিষ্ট গবেষণার সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন পেনসিলভেনিয়া, কানসাস ও বাফেলো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। কিন্তু এই জম্বি বরফ আদতে কী? সাধারণত, হিমবাহ থেকে বড়ো বড়ো বরফের চাঁই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে, তা দ্রুত গলে যায়। এই প্রকাণ্ড বরফখণ্ডগুলিই সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী। তবে জম্বি বরফের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু অন্যরকম। এই বরফের চাদর এখনও বিচ্ছিন্ন হয়নি হিমবাহ থেকে। অথচ, তাদের গভীরতা ক্রমশ কমছে তুষারপাত হ্রাস হওয়ার কারণে। এই অঞ্চলের বরফকেই জম্বি বরফ হিসাবে অভিহিত করেছেন গবেষকরা। 

জম্বির কামড়ে যেমন স্বাভাবিক মানুষও আক্রান্ত হয়ে জম্বি হয়ে যায়, এই বরফগুলির চরিত্রও অনেকটা তেমনই। হিমবাহ থেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে না পড়ায়, এই বরফগুলির গলন প্রভাবিত করবে মূল হিমবাহকেও, যেগুলিকে এখনও স্পর্শ করতে পারেনি উষ্ণতাজনিত ক্ষয়। ফলে, আরও ত্বরান্বিত হবে বরফের গলন। গবেষকদের মতে, পূর্ব-অনুমানের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ গতিতে ক্ষয়প্রাপ্ত হতে শুরু করেছে গ্রিনল্যান্ডের হিমবাহগুলি। যার পিছনে দায়ী মূলত জম্বি বরফ। 

গবেষকদের মতে ইতিমধ্যেই গ্রিনল্যান্ডে ১২০ ট্রিলিয়ন বরফ জম্বি-বরফের চরিত্র ধারণ করেছে। অর্থাৎ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-জুড়ে ৩৭ ফুট গভীর বরফের চাদর বিছিয়ে দিলে, তার আয়তনও খানিক কম হবে এই জম্বি-বরফের থেকে। এই বিপুল পরিমাণ বরফের গলনেই ন্যূনতম ১০.৬ ইঞ্চি বাড়বে সমুদ্রের জলতল। তাছাড়া মূল হিমবাহের গলন তো রয়েছেই। সবমিলিয়ে ২১০০ সালের মধ্যে পৃথিবীর জলতল বৃদ্ধি পেতে পারে প্রায় ৩০ ইঞ্চি। বলার অপেক্ষা থাকে না, তাতে বাসস্থান হারাবেন বহু মানুষ। তবে বাঁচার উপায়? জলবায়ু পরিবর্তন ও কার্বন নির্গমন কমিয়েই এই তুষার-গলনের হারকে ধীর করা সম্ভব খানিকটা। তবে আর্কটিক অঞ্চল এবং গ্রিনল্যান্ডে এখনও পুরোদমেই চলছে খনিজ তেলের খাদান কিংবা কল-কারখানা। তবে সেদিকে বিন্দুমাত্রও নজর নেই রাষ্ট্রপ্রধানদের…

Powered by Froala Editor