ফুটফুটে একটি সন্তান। এখনও ভালো করে চোখটুকুও ফোটেনি। পৃথিবী জুড়ে এত আশ্চর্য ছড়িয়ে আছে, ‘বিস্ময় তাই জাগে প্রাণ’, সেই স্পর্শই পায়নি সে। তার আগেই মিটিমিটি হাসতে শিখেছে। কি করে জানবে, মাত্র ১৫ দিন বয়স তার। কাপড়ে জড়িয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে দুজন মহিলা। না, এই শিশুটি তাঁদের কেউ হয় না। কিছুক্ষণ আগে শিশুটির বাবা একে ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে গেছেন! করোনা বিধ্বস্ত দেশ সম্প্রতি এমনই একটি মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী থাকল।
অসমের কোকরাঝাড়ের দীপক ব্রহ্ম এবং তাঁর স্ত্রী বেশ শান্তিতে বসবাস করছিলেন। গুজরাটে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করছিলেন। করোনা সংক্রমণের জন্য মার্চ মাসের শেষ থেকে গোটা দেশে শুরু হল লকডাউন। তখনই কাজ হারিয়ে নিজের গ্রামে ফিরে এলেন দীপক। এমন পরিস্থিতিতে কাজ খুঁজে পাওয়াও অত্যন্ত মুশকিল। এদিকে এক বছরের ছোটো একটি মেয়েও আছে। স্ত্রীও সন্তানসম্ভবা। কাছুগাঁও পাতাকাটা গ্রামে নিজের শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পর তাঁর স্ত্রী আরও একটি কন্যাসন্তান প্রসব করেন।
একে রোজগার নেই, চাকরি পাওয়ার আশা নেই, ঠিকমতো খেতেও পারেন না। সদ্যোজাতকে কী খাওয়াবেন? শেষ পর্যন্ত এক জায়গায় যোগাযোগ করে ঠিক করলেন, সদ্যোজাত মেয়েটিকে বিক্রি করে দেবেন। হাতে কিছু টাকাও আসবে, মেয়েটিও বেঁচে যাবে। এই পুরো ব্যাপারটা গোপন রাখেন স্ত্রীর কাছে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সূত্র মারফৎ খবর পেয়ে পুলিশ গ্রেফতার করেন দীপক ব্রহ্মকে। গ্রেফতার করেন ওই দুই মহিলাকেও, যাঁদের কাছে সদ্যোজাত কন্যাসন্তানটিকে বিক্রি করছিল দীপক।
এই ঘটনা এখানেই থেমে থাকবে না। গোটা দেশে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে চলা একের পর এক ঘটনা সরকারের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। এত হাজার হাজার মানুষের রোজগার হঠাৎ এক তুড়িতে চলে গেল। এঁরা বাঁচবে কেমন করে! কেউ ট্রেনের তলায় চাপা পড়ে মারা যাচ্ছেন, কেউ নিজের সন্তান বিক্রি করে দিচ্ছেন। এইভাবে আর কতদিন? যেসব কারখানায় ওই শ্রমিকরা কাজ করতেন, সেখানকার কর্তৃপক্ষ কি দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারেন? নাকি মুনাফা আর প্রচারসর্বস্ব পৃথিবীই এখন ‘নিউ নর্মাল’? প্রশ্ন উঠছে…
আরও পড়ুন
পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা তুলে ধরতে হাতিয়ার র্যাপ, ডাক এল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকেও
Powered by Froala Editor