তৈরি হবে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, হিমাচলে কাটা পড়তে চলেছে অসংখ্য বিরল পাইন গাছ

পাতার গড়ন অনেকটা ঝাউ কিংবা দেবদারুর মতোই। তবে গাছের ডালে ঝুলে থাকা অদ্ভুত-দর্শন ফলই পাইন গোত্রের অন্যান্য গাছের থেকে পৃথক করে দেয় এই প্রজাতিকে। চিলগোজা পাইন (Chilgoza Pine)। ২০১১ সালে বিপন্নপ্রায় প্রজাতির তালিকায় এই গাছটিকে অন্তর্ভুক্ত করে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার। সমীক্ষায় উঠে এসেছিল বিগত এক দশকে প্রায় ৩০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে এই গাছের সংখ্যা। কিন্তু বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা সত্ত্বেও এবার হিমাচল প্রদেশে (Himachal Pradesh) কাটা পড়তে চলেছে এই প্রজাতির কয়েক হাজার গাছ। 

পাহাড়ের উঁচু ঢালে, দুর্গম প্রকৃতিতেই কেবলমাত্র দেখে মেলে চিলগোজার। সাধারণত, হিমালয়ের হিমাদ্রি পর্বতমালার ভূ-প্রকৃতিকেই এই গাছের জন্য সবচেয়ে অনুকূল হিসাবে ধরে নেওয়া হয়। ফলে, স্বাভাবিকভাবেই কাশ্মির এবং হিমাচল প্রদেশ ছাড়া ভারতের আর কোনো রাজ্যেই দেখা মেলে না চিলগোজা পাইনের। তবে বিগত দু’দশক ধরে নগরায়নের জেরে ধ্বংস হতে বসেছে সেটুকুও। 

বিগত দুই দশকে দশটিরও বেশি বাঁধ ও জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি হয়েছে হিমাচলে। তার জন্য কাটা পড়েছে হাজার হাজার চিলগোজা। শুধু ২০১৮ সালে জাঙ্গি-থোপান পোওয়ারি হাইড্রো-প্রোজেক্টের জন্য কাটা পড়েছিল তিন হাজার চিলগোজা। ২০১৯ ও ২০২০ সালেও ঘটেছিল একই ঘটনা। এবার ফের নজিরবিহীন বৃক্ষচ্ছেদনের পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে হিমাচল প্রদেশের কিন্নর জেলায়। 

সাতলেজ নদীর ওপর ৩০০০ মেগাওয়াটের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। আর তার জন্য প্রায় ৩৫০ একর অরণ্য-নিধনে সবুজ সংকেত দিয়েছে সরকার। এর ফলে প্রায় দশ হাজার চিলগোজা কাটা পড়তে পারে বলেই আশঙ্কা স্থানীয়দের। কেননা, ভারত তো বটেই, গোটা এশিয়ার মধ্যে চিলগোজার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি হিমাচলের এই জেলাতেই। 

আরও পড়ুন
গরু নয়, এ-দেশে গাছে চড়ে ছাগল!

ইতিমধ্যেই এই ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন পরিবেশকর্মীরা। আন্দোলনে সামিল হয়েছে কিন্নর-ভিত্তিক একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং সংরক্ষণ সংস্থা। তবে এখনও পর্যন্ত তাতে খুব একটা কর্ণপাত করেনি সরকার। প্রশাসনের দাবি, প্রকল্প শেষ হলে ক্ষতিপূরণ হিসাবে কৃত্রিমভাবে রোপণ করা হবে চিলগোজা গাছ। যদিও সরকারের এই প্রতিশ্রুতিকে ঘিরে রয়েছে ধোঁয়াশা। পাশাপাশি, খোদ গবেষকরাই জানাচ্ছেন এই গাছের কৃত্রিম প্রজনন দুরূহ একটি বিষয়। ২০১৮ সালে হিমাচলেও ক্ষতিপূরণ হিসাবে কৃত্রিমভাবে রোপণ করা হয়েছিল চিলগোজার চারা। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শেষ পর্যন্ত বেঁচেছে মাত্র ১০ শতাংশ গাছ। সেদিক থেকে একমাত্র বৃক্ষচ্ছেদন আটকাতে পারলে তবেই অবলুপ্তির হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব এই প্রজাতিটিকে। এখন দেখার, পরিবেশকর্মীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকার আদৌ সিদ্ধান্ত বদল করে কিনা…

আরও পড়ুন
গাছ থেকে জন্ম ঝর্নার, বিরল দৃশ্য মন্টেনেগ্রোয়

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
গাছ-গাছালির উপস্থিতি কমিয়ে আনে স্ট্রোকের সম্ভাবনা, জানাচ্ছে গবেষণা