‘ডাকব্যাক’ নামটা শুনলেই নস্টালজিয়া ঘিরে ধরে আমাদের। এখনকার দিনে যেমন নুডুলস মানেই ম্যাগি, তখন ওয়াটারপ্রুফ মানেই ‘ডাকব্যাক’। বেঙ্গল কেমিক্যালস এবং জি ডি ফার্মাসিউটিক্যালস প্রাইভেট লিমিটেড (বোরোলিন)-র মতোই, পরাধীন ভারতে এক বাঙালির হাত ধরে জন্ম নিয়েছিল আরেকটি সংস্থা, বেঙ্গল ওয়াটার প্রুফ লিমিটেড।
ব্রিটিশ শাসনকালে আমদানিকৃত অন্যান্য পণ্যের মধ্যে ছিল টেক্সটাইল ও ওয়াটারপ্রুফ। স্বভাবতই দাম ছিল অনেক বেশি যা সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। সে-কারণেই সুরেন্দ্র মোহন বসু প্রতিষ্ঠা করেন ‘ডাকব্যাক’। ডাকব্যাক নামটির উৎপত্তি ইংরেজি বাগধারা ‘লাইক ওয়াটার অব এ ডাকস ব্যাক’ থেকে। যার বাংলা অর্থ স্বল্প ও দীর্ঘকালীন প্রভাবহীন। ডাক ব্যকের ইউএসপি ছিল এর স্থায়িত্ব। যার জন্য মানুষ আজও একে মনে রেখেছে।
মনে রাখবে নাই বা কেন? এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বার্কলে ও স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনি সুরেন্দ্র মোহন বসু। সাল ১৯২০। কিন্তু হঠাৎ করে জন্ম নেয়নি এই সংস্থা। এর পরিকল্পনা কারাগারের মধ্যে থেকে। জাতীয়তাবাদী সুরেন্দ্র মোহন ভারতীয় সৈন্যদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। ভারতের স্বাধীনতার জন্যও লড়াই করেছিলেন। এর জন্য তাঁকে জেলে যেতে হয়, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়। অভিযোগ, রাষ্ট্রের বিরোধিতা। এই সময়েই তিনি জানতে পারেন ভারতীয় সৈন্যদের কিভাবে দুর্গম অঞ্চলে উপযুক্ত গামবুট, বর্ষাতি ও গ্রাউন্ডশিট ছাড়াই লড়াই করে।
জেল থেকে বেরিয়ে ভাই অজিত মোহন, যোগেন্দ্র মোহন ও বিষ্ণুপদকে নিয়ে তৈরি করলেন ডাকব্যাক — সহজলভ্য ও উচ্চমানের ওয়াটার প্রুফ। শুরু হল ডাকব্যাকের যাত্রা। প্রথম ঠিকানা ছিল নজর আলি লেন, সুরেন্দ্র মোহনের পৈতৃক বাড়ি। ১৯৪০ সালে ডাকব্যাকের নতুন নাম হয় বেঙ্গল ওয়াটার প্রুফ লিমিটেড। কিন্তু ততদিনে ডাকব্যাক বাজারে খ্যাতি পেয়ে গেছে।
স্কুলব্যাগ থেকে শুরু করে আইস ব্যাগ, গামবুট থেকে শুরু করে এয়ার পিলো – সবেতেই ডাকব্যাকের নামডাক। সেনাদের জন্যেও ছিল স্নো অ্যানকেল বুট, লাইফ জ্যাকেট, সাব মেরিন এস্কেপ স্যুট – সবই।
১০০ বছরের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়েও রমরমিয়ে চলছে এই সংস্থা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এর শাখা। এক বাঙালির স্বপ্ন লুকিয়ে ছিল এর পিছনে। আজ তা ইতিহাস...