এক বছরও হয়নি, কলকাতার পার্শ্ববর্তী এলাকা সাক্ষী থেকেছে আমফানের মতো বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের। একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় হয়ে উঠেছে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। আর এইসব বিপর্যয়ের সময় ত্রাণকার্যের ভূমিকা হয়ে পড়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে, সেখানে দুর্গত মানুষদের খুঁজে পাওয়ার কাজটাও তো সহজ নয়। তাহলে?
“ড্রোন ক্যামেরার মাধ্যমে অনেক জায়গাতেই এখন নজরদারি চালানো হয়। কিন্তু ধরা যাক ছবি তোলার জন্য নূন্যতম আলোও নেই, বা দুর্গত মানুষটি চাপা পড়ে আছেন কোনো ভগ্নস্তূপের নিচে। তখন তো ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি চালানো সম্ভব নয়।” বলছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রনিক অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন বিভাগের অন্তিম বর্ষের ছাত্রী অন্বেষা ব্যানার্জি। আর এই সমস্যার সমাধান করতেই তাঁরা তৈরি করে ফেলেছেন এক অভিনব ড্রোন। যার তথ্য সংগ্রহের উৎস আলো নয়, শব্দ।
অন্বেষা জানালেন, “আমরা এই ড্রোনের নাম রেখেছি লিসেনার ড্রোন। একজন মানুষ হারিয়ে গেলে যেমন তাঁর গলার স্বর লক্ষ করে তাঁকে খোঁজার চেষ্টা করা হয়, এক্ষেত্রেও সেই একই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে।” গত ফেব্রুয়ারি মাসেই সম্পূর্ণ তৈরি হয়ে গিয়েছিল ড্রোনটি। আর এই বছরখানেকের মধ্যে সমস্ত ধরণের পরীক্ষামূলক উড়ানে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করেছে এই নতুন প্রযুক্তি। প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত অপর একজন ছাত্র অচল নিলহানি জানালেন, “আপাতত ৪জি যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে ড্রোনটি কাজ করলেও পরে এটিকে ৫জি ব্যবস্থায় বদলে ফেলার পরিকল্পনা আছে।” ইন্ডিয়ান মোবাইল কংগ্রেসের সেরা ৩০ প্রকল্পেও জায়গা করে নিয়েছে অন্বেষা-অচলের তৈরি এই ড্রোন।
অন্বেষা এবং অচল নিজেদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রকল্পের কাজ শুরু করলেও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সবরকমের সাহায্য পেয়ছেন তাঁরা। ইউএভি ইনোভেটরস ল্যাবরেটরিতে সমগ্র কাজটি তত্ত্বাবধান করেছেন অধ্যাপক পি ভেঙ্কটেশরন। এর মধ্যে প্রতিটা উড়ানেই দেখা গিয়েছে শব্দের উৎসের প্রায় সঠিক অবস্থান নির্ণয় করতে পেরেছে এই ড্রোন। মিটার পাঁচেকের প্রক্সিমিটি বাস্তবে তেমন বোঝা যায় না। তাছাড়া নানা ধরণের শব্দ উৎসের মধ্যে কোনটি কোনো মানুষ বা অন্য প্রাণীর আর্তনাদ, তাও নির্ভুলভাবে চিনতে পারে এই ড্রোন। এর মধ্যে বেশ কিছু উদ্ধারকারী সংগঠনের সঙ্গে প্রয়োগের ব্যাপারে কথা হলেও শেষ পর্যন্ত করোনা পরিস্থিতিতে কাজ বেশি এগোয়নি। অবশ্য খুব তাড়াতাড়ি যে বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর সহ অন্যান্য সংস্থার পক্ষ থেকে এই প্রযুক্তি গ্রহণ করা হবে, সে-বিষয়ে আশাবাদী প্রত্যেকেই।
Powered by Froala Editor