ক্রমশ জটিল থেকে জটিলতর হয়ে চলেছে দেশের করোনা পরিস্থিতি। অব্যাহত সংক্রমণের হার। সেইসঙ্গে চিকিৎসার সরঞ্জামের চাহিদা তো রয়েছেই। আর সেই কারণেই পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে মাঠে নেমেছিল ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও। গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ্যে এল তাদের তৈরি অ্যান্টি-কোভিড ড্রাগ ২-ডিজি। গতকাল এই ড্রাগটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ হর্ষ বর্ধন।
ডিআরডিও কর্তৃক প্রস্তুত এই ওষুধটির পুরো নাম ২-ডিঅক্সি-ডি-গ্লুকোজ। গতবছরই শুরু হয়েছিল এই এই ওষুধ তৈরির প্রক্রিয়া। হায়দ্রাবাদের রেড্ডিস ল্যাবরেটরি’র সঙ্গে গাঁট-ছড়া বেঁধে এই কাজে নেমেছিল ডিআরডিও। গতবছর এপ্রিলেই মিলেছিল প্রাথমিক সাফল্য। গবেষকরা লক্ষ্য করেছিলেন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যথাযথ কাজ করছে ড্রাগটি। মে মাস থেকেই শুরু হয় ক্লিনিকাল ট্রায়াল। ডিসেম্বর মাসে চূড়ান্ত পর্যায়ের ট্রায়াল চলে দিল্লি, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, বাংলা, রাজস্থান-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যের মোট ২৭টি হাসপাতালে। সেই ট্রায়ালের রিপোর্ট বিশ্লেষণ করার পরেই জরুরিকালীন ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল এই ড্রাগটিকে।
গতকাল উদ্বোধনের পর, বিভিন্ন রাজ্যের হাসপাতালে মোট ১০ হাজার ডোজ পাঠানো হয় এই ওষুধটি। পাউডারের আকারে প্যাকেটবন্দি অবস্থায় আসবে এই ওষুধ। তা জলে গুলে খাওয়াতে হবে রোগীদের। এই ওষুধ শুধু করোনাভাইরাসের বৃদ্ধিই আটকায়, তেমন না। গবেষণা বলছে, আক্রান্তের দেহে অক্সিজেনের মাত্রা ধরে রাখতেও যথেষ্ট কার্যকর এই ড্রাগ। ফলে আয়ত্তে আসবে অক্সিজেনের চাহিদাও।
কিন্তু কীভাবে কাজ করে এই ড্রাগ? কেনই বা এতো গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এই ওষুধটিকে? “করোনা একদম নতুন একটা অসুখ। তাই প্রতিনিয়তই নতুন ড্রাগ আসছে আর পুরনো ড্রাগগুলি অফলেভেল হয়ে যাচ্ছে। রেমডিসিভিরের সাবস্টিটিউট হিসাবেই ২-ডিঅক্সি-গ্লুকোজ ড্রাগটি এসেছে। এটা মূলত একটা সিউডো গ্লুকোজ। মানে গ্লুকোজ কিন্তু গ্লুকোজের মতো কাজ করতে পারে না। করোনাভাইরাসের যে কোনো মিউট্যান্টেরই বংশবিস্তারের জন্য গ্লুকোজের প্রয়োজন হয়। সেটা আমাদের দেহ থেকেই সংগ্রহ করে ভাইরাস। এখন ২-ডিগি ড্রাগটি এমন একটি গ্লুকোজ যেটা জমা হয় ফুসফুসের কোষে। ভাইরাস সেটা নেওয়ার পরে আর রেপ্লিকেশন করতে পারে না। সেই কারণে, রোগের সিভিয়ারিটি এবং তার সঙ্গে অক্সিজেনের ঘাটতিও খানিকটা কমে। বিষয়টা অনেকটা চিটারকে চিট করার মতোই”, জানালেন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক ডঃ সৌমিতা পাল।
আরও পড়ুন
গঙ্গাতীরে গণকবর, দেশের করোনা-পরিস্থিতির প্রতিফলন উত্তরপ্রদেশে?
মূলত মডারেট থেকে সিভিয়ার রোগীদের ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হবে এই ড্রাগটি। তবে সতর্ক করলেন সৌমিতা, “প্রতি ড্রাগেরই নিজস্ব কিছু কাজ আছে। তাদের আলাদা আলাদা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। ফলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না এই ওষুধটিও।”
আরও পড়ুন
মজবুত করতে হবে গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিকাঠামো, করোনা-মোকাবিলায় নিদান চিকিৎসকদের
এর আগেও দেশের করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলাতে একাধিক গুরুতর পদক্ষেপ নিয়েছে ডিআরডিও। একটি সিলিন্ডার থেকে একাধিক রোগীকে অক্সিজেন দেওয়ার বন্দোবস্ত করাই হোক, কিংবা গুজরাট-উত্তরপ্রদেশে ৯০০ বেডের হাসপাতাল তৈরি— জরুরি পরিস্থিতিতে বারবার ত্রাতার ভূমিকায় দেখা গেছে ডিআরডিও-কে। এবার মহামারীর এই কঠিন পরিস্থিতিতে ডিআরডিও-র তৈরি এই ওষুধটি গেম চেঞ্জার হয়ে উঠতে চলেছে, সে ব্যাপারে আশাবাদী বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন
লোহার ফুসফুস নিয়েই ৬৮ বছর, করোনায় সন্ত্রস্ত আলেকজান্ডার
Powered by Froala Editor