নারীর গর্ভেই বেড়ে ওঠে সন্তান। সেখানেই ধীরে ধীরে পূর্ণতা পাই আমরা। কিন্তু তিনি যদি মানসিকভাবে প্রস্তুত না হন? সেই মুহূর্তেই যদি সন্তান না চান? বা অন্য কোনো কারণে সেই সন্তান চান না? সেখান থেকেই নারীর গর্ভপাতের সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্র সরকার।
১৯৭১-এর মেডিক্যাল টার্মিনেশন অফ প্রেগনেন্সি অ্যাক্টেই বদল আনতে চলেছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ভ্রূণের যদি কোনো সমস্যা থাকে, সে ক্ষেত্রে গর্ভপাতের কোনো ঊর্ধ্বসীমা থাকবে না। গর্ভপাত করা হবে কি হবে না, মা-বাবার সঙ্গে কথা বলে সেই সিদ্ধান্ত নেবে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের মেডিক্যাল বোর্ড। তাঁরা ছাড়পত্র দিলে ২৮ সপ্তাহেও গর্ভপাত করানো যাবে। এছাড়াও, ধর্ষণের ফলে বা নাবালিকা অবস্থায় যদি কেউ গর্ভবতী হন, তাহলে এতদিন এই আইন অনুযায়ী ২০ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভপাত করা যেত। নয়া সংশোধনী অনুযায়ী, সেই ঊর্ধ্বসীমা বাড়িয়ে ২৪ সপ্তাহ করা হয়েছে। অবশ্যই এই জন্য দুজন ডাক্তারের অনুমতি লাগবে। ২৪ সপ্তাহ পেরিয়ে গেলে তখন আবার আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে।
একজন নারী সন্তান চান কি চান না, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার তাঁর পুরোপুরি অধিকার আছে। নানা কারণে তিনি ওই মুহূর্তে সন্তান নাও চাইতে পারেন তিনি। আর ভ্রূণের কোনো ত্রুটি আছে কিনা, সেটা একটি নির্দিষ্ট সময় পরই বোঝা যায়। শেষ মুহূর্তে এসে অনেকেই সিদ্ধান্ত নিতে পান না। সময়সীমা বাড়িয়ে আসলে যে সেটাকেই মান্যতা দেওয়া হল, সেই কথাই বলছেন অনেকে।
অন্যদিকে, উঁকি দিচ্ছে একটি আশঙ্কাও। ভারতের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে জোর করেও গর্ভপাত করানো হয় অনেকসময়, নারীর সম্মতি না থাকলেও। যে-দেশে কন্যাভ্রুণ হত্যার মতো জঘন্য ঘটনা নিয়মে পরিণত হয়েছে, সেখানে এই আইনের অপব্যবহার হবে কিনা, উঠছে সেই প্রশ্ন। সামাজিক স্তরে কতটা মান্যতা দেওয়া হয় একজন নারীর সিদ্ধান্তকে? তিনি নিজেই বা কতটা ‘স্বাধীন’ গর্ভপাত করানো বা না-করানোর ক্ষেত্রে? আইন পাশের পাশাপাশি, এই বিষয়গুলিও মাথায় রাখা প্রয়োজন।