১৯৫০ সালে, বিখ্যাত লেখক ডরন কে অ্যানট্রিম ‘আর্গোসি’ পত্রিকায় লেখেন,- “You've probably never heard of Dr. Yellapragada SubbaRow, Yet because he lived you may live longer". উক্তিটি যথার্থ। আজ পার্নিসিয়াস অ্যানিমিয়া, ক্যানসারের মতো মারণব্যাধির হাত থেকে মানুষের জীবন রক্ষা পাচ্ছে শুধুমাত্র ডঃ সুব্বারাও এর অবদানে, এই কথাটি বললে মোটেও অত্যুক্তি হয় না।
অন্ধ্রপ্রদেশের পশ্চিম গোদাবরী জেলার এক ছোট্ট শহর ভীমাবরম। ১৮৯৫ সালের ১২ই জানুয়ারি এক তেলেগু ব্রাহ্মণ পরিবারে সুব্বারাও এর জন্ম হয়। বাবা জগন্নাথম ও মা ভেনকাম্মার সাতটি সন্তানের মধ্যে চতুর্থ সন্তান ছিলেন সুব্বারাও। বাবা জগন্নাথম রেভিনিউ কালেক্টারের কাজ করতেন। তাঁর সামান্য আয়ে ভীষণ কষ্টে সংসার চলতো। অধিকাংশ দিন মা ভেনকাম্মা নিজে না খেয়ে অতি অল্প খাবার সাত ভাইদের মধ্যে ভাগ করে দিতেন। সুব্বারাও অসহনীয় দারিদ্র্যের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে তেরো বছরে কাশীতে চলে যাবার জন্যে ঘর ছাড়লেন। মনে আশা, মন্দিরের সামনে ভক্তদের কলা বেচে রোজগার করবেন। অন্য ভাইরা টের পেয়ে অনেক বুঝিয়ে মাঝপথ থেকে তাঁকে ঘরে ফেরালেন। মা ভেনকাম্মার কাছে শপথ করতে হল জীবনে তাঁকে পড়াশোনা করে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।
সুব্বারাও-এর পড়াশোনার শুরু হয় রাজমুন্দ্রিতে। এরপর তাঁকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষার জন্যে মাদ্রাজের হিন্দু হাইস্কুলে ভর্তি করানো হয়। ঠিক এই সময়েই সুব্বারাও-এর জীবনে নেমে এল বিপর্যয়। ১৯১৩ সালে বাবা জগন্নাথম মারা গেলেন। অসহায় ভেনকাম্মা একা সংসারের হাল ধরলেন। সুব্বারাও অনেক কষ্টে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষার জন্যে প্রস্তুত হলেন, কিন্তু বই কেনার পয়সা নেই, স্কুলের ফি দেবার সামর্থ্য নেই, পড়াশোনায় তাঁর মন বসল না। দু-বার অকৃতকার্য হয়ে তিনবারের বার পাস করলেন ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা। সুব্বারাও-এর ছাত্রজীবনে, পরের অধ্যায়টি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে সুব্বারাও ইন্টারমিডিয়েট পড়ার জন্যে ভর্তি হন। অঙ্ক ও বিজ্ঞানে তাঁর বিশেষ দখল ছিল। অনায়াসেই তিনি কঠিন গাণিতিক সমাধান করতেন এবং বিজ্ঞানের দুরূহ তত্ত্বগুলি আয়ত্ত করতে পারতেন। অথচ এই সময়ে তাঁর মনে এক অন্য চিন্তা দেখা দেয়। সংসার, পরিবার-পরিজন, সমাজ সব কিছুই তাঁর কাছে অসার মনে হয়। উদাসীন হয়ে পড়েন লেখাপড়া সম্পর্কেও। ওই বয়সেই পড়ে ফেলেন গীতা, পুরান, বাইবেল, কোরান। ঠিক করেন, সংসার ছেড়ে রামকৃষ্ণ মিশনে যোগ দিয়ে মানুষের সেবা করবেন। মা ভেনকাম্মা মর্মাহত হলেন এবং সুব্বারাওকে ডেকে স্পষ্ট জানালেন, এই বিষয়ে তাঁর বিন্দুমাত্র মত নেই। মায়ের অমতে রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজরা সুব্বারাওকে মিশনের কাজে যোগ দেবার অনুমতি দিলেন না। কিন্তু তাঁরা সুব্বারাও-এর বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ দেখে ডাক্তারি পড়ার পরামর্শ দিলেন। এতে সমাজসেবাও হবে আর মাকে তিনি আর্থিক সাহায্য করতে পারবেন। এই ঘটনার পরে সুব্বারাও এর জীবন অন্যদিকে মোড় নিল। ইন্টারমিডিয়েট পাস করে সুব্বারাও ভর্তি হলেন মাদ্রাজ মেডিকেল কলেজে।
ভেনকাম্মার জীবনের সব উপার্জন সংসার চালাতে ব্যয় হত, তিনি বহুকষ্টে সুব্বারাও এর পড়াশোনার খরচ যোগাতেন। তাঁর মনে বিশ্বাস ছিল একদিন তাঁর সুব্বারাও দশের মধ্যে একজন হয়ে উঠবে। কিন্তু মেডিকেল কলেজে পড়ার খরচ যোগান প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠল। কিন্তু ঈশ্বরের ইচ্ছায় কোন কাজ আর অপূর্ণ থাকে? সেই সময়ে পরিত্রাতা হয়ে এগিয়ে এলেন ভেনকাম্মার দুর্সম্পকীয় আত্মীয় কস্তুরী সূর্যনারায়ণ মূর্তি। তিনি সুব্বারাওকে ছোটো থেকেই খুব স্নেহ করতেন। পরিবারের দারিদ্রের সময়ে তিনি সুব্বারাও-এর পড়াশোনার খরচ চালানোর ভার নিলেন। পরবর্তীকালে সুব্বারাও কস্তুরীর কন্যা শেষাগিরিকে বিবাহ করেন। দুই পরিবারের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়।
মেডিকেল পরীক্ষার জন্যে সুব্বারাও খুব ভালোভাবে তৈরি হতে লাগলেন। তখন দেশে স্বদেশি আন্দোলনের জোয়ার এসেছে। গান্ধীজির ডাকে দেশের মানুষ বিদেশি পণ্য বর্জন করে দেশের তৈরি সামগ্রী ব্যবহার করা শুরু করেছেন। সুব্বারাও-এর মন স্বদেশিচেতনায় উত্তাল হল। তিনি মেডিকেল কলেজে খাদির তৈরি সার্জিক্যাল গাউন পরা শুরু করলেন। সেই সময় কলেজে ছিলেন সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক এম. সি. ব্র্যাডফিল্ড। যেমন স্বৈরাচারী, বর্ণবিদ্বেষী তেমনি প্রভাবশালী। সুব্বারাও স্বদেশি ভাবনায় সাড়া দিয়ে তাঁর বিরাগভাজন হলেন। তিনি সুব্বারাও-এর MBBS ডিগ্রী আটকে দিলেন এবং সাধারণ মানের LMS ডিগ্রি দিলেন। সুব্বারাও পরীক্ষায় যথেষ্ট ভালো করলেও তিনি বর্ণবৈষম্যের শিকার হলেন। LMS ডিগ্রি নিয়ে তাঁর মাদ্রাজ স্টেট মেডিক্যাল সার্ভিসে পরীক্ষা দেবার সুযোগ হল না। সুব্বারাও মাদ্রাজের ডঃ লক্ষীপতি আয়ুর্বেদিক কলেজের এনাটমি বিভাগে অধ্যাপকের কাজ নিলেন। এই সময় থেকেই ভারতীয় ভেষজবিদ্যার প্রতি তাঁর গবেষণার আগ্রহ জাগে। সময়টা ১৯২০, সেই সময়ে বিখ্যাত বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর, পল এরলিশ ইত্যাদিরা বিদেশে বিভিন্ন রোগের ভ্যাকসিন আবিষ্কার করে ফেলেছেন, বিশ্বজুড়ে চলছে আলোচনা। চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন গবেষণার ধারা স্থাপিত হচ্ছে দিকে দিকে। সুব্বারাও অনুভব করলেন, এই সময়ে মানুষের দরকার বিভিন্ন রোগের প্রাণদায়ী ওষুধ যা আয়ুর্বেদ ভেষজ থেকে পাওয়া সম্ভব। কিন্তু উচ্চতর গবেষণার উপযুক্ত পরিকাঠামো আয়ুর্বেদিক কলেজে না থাকায় তিনি হতাশ হয়ে পড়েন| এই সময় একজন আমেরিকান চিকিৎসকের সঙ্গে তাঁর আলাপ হয় এবং তাঁর থেকে তিনি মার্কিনপ্রদেশে গবেষণার সুযোগ ও বিভিন্ন বৃত্তির সম্পর্কের বিস্তারিত জানতে পারেন। সৌভাগ্যক্রমে, ওই সময় মাদ্রাজের দুটি চ্যারিটিবল সংস্থা (সত্যলিঙ্গ নাইকার ও মাল্লাডি চ্যারিটি) তাঁকে বিদেশে গবেষণার জন্যে অর্থসাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং কস্তুরীর উৎসাহে ও সাহায্যে সুব্বারাও পাড়ি দেন বোস্টনে, ১৯২২ সালের অক্টোবর মাসে।
সুব্বারাও-এর আমেরিকায় উচ্চতর গবেষণার কাজ শুরু হয় হাভার্ড স্কুল অফ ট্রপিকাল মেডিসিনে। সেখানকার ডিরেক্টর ডঃ রিচার্ড স্ত্রং সুব্বারাও-এর জ্ঞান ও কর্মদক্ষতা দেখে তাঁকে গবেষণাগারে কাজের অনুমতি দেন এবং স্কলারশিপের ব্যাবস্থা করেন। কিন্তু আমেরিকায় খরচ চালানো অসম্ভব হয়ে উঠল। তিনি সারাদিন ক্লাস করার পর বোস্টনের পিটার ব্রেন্ড ব্রাইট হসপিটালে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পার্ট-টাইম কাজ করতেন খরচ চালানোর জন্যে। তাঁর বন্ধুরা অবাক হতেন, বিশ্রাম ও অন্যান্য কাজের সময় তিনি বার করতেন কীভাবে! এই অতি অল্প সময়ের মধ্যেও তিনি তাঁর স্ত্রী, সূর্যনারায়ণ মূর্তি ও অন্যান্য আত্মীয়দের সুন্দর করে চিঠি লিখে তাঁর আমেরিকার জীবনযাত্রার বর্ণনা দিতেন, বিজ্ঞান বিষয়ক নোট তৈরি করতেন। এই কঠিন জীবনযাত্রার কোনো ক্ষোভ কোনদিন তাঁর মধ্যে প্রকাশ পায়নি।
সুব্বারাও ১৯২৪ সালে হার্ভার্ড স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন থেকে ডিপ্লোমা লাভ করেন এবং ডিপার্টমেন্ট অফ বায়োকেমিস্ট্রিতে পিএইচডি প্রোগ্রামে যোগ দেন। হার্ভাডে তাঁর গবেষণার মেন্টর ছিলেন অধ্যাপক সাইরাস ফিস্কি। কিছুদিনের মধ্যেই সুব্বারাও তাঁর সহকর্মী ও অন্যান্য অধ্যাপকের থেকে উচ্চপ্রশংসিত হলেন তাঁর গবেষণাকার্যের জন্য। এই সময়ে তাঁর একটি গবেষণা বিজ্ঞানীমহলে সাড়া ফেলে - তা হল দেহরস ও কলাস্থান থেকে ফসফরাসের পরিমাপ পদ্ধতি। এই আবিষ্কার বিজ্ঞানজগতে "ফিস্কি-সুব্বারাও মেথড" বলে পরিচিতি। তাঁর এই কাজ সেই সময়ে “জার্নাল অফ বায়োলিজিক্যাল কেমিস্ট্রি” পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এবং তা বায়োকেমিস্ট্রি পাঠ্যপুস্তকের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরপর সুব্বারাও পেশিসঙ্কোচনে এডিনোসিন ট্রাইফসফেট (এটিপি) ও ফসফোক্রিয়েটিন এর গুরুত্বপূর্ণ কার্যগুলির জৈবরাসায়নিক ব্যাখ্যা দেন। সুব্বারাও এর মেন্টর অধ্যাপক ফিস্কি জার্মানির নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী অট্ট মায়ারহফকে তাঁদের গবেষণার কাজ সম্পর্কে বলেন। মায়ারহফ ও তাঁর ছাত্র কার্ল লোম্যান একই কাজ শুরু করেন এবং সুব্বারাও ও অধ্যাপক ফিস্কিকে কোনো কৃতিত্ব না দিয়ে গবেষণার কাজ বোস্টনের ফিজিওলজিক্যাল কংগ্রেসে ব্যাখ্যা করেন। সুব্বারাও নিজে ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন এবং তাঁর গবেষণা তিনি সবার সামনে উপস্থাপন করেন। পরবর্তীকালে, সুব্বারাও, ফিস্কি ও কার্ল লোম্যানকে একই সঙ্গে এটিপি আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেওয়া হয়।
১৯৩০ সালে হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সুব্বারাও ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। দুঃখের বিষয়, গবেষণায় প্রভূত কৃতিত্ব দেখানো সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তপক্ষ তাঁকে স্থায়ী অধ্যাপকের পদে নিয়োগ করতে চাইলেন না। এর পিছনে অনেক কারণ ছিল। অধ্যাপক ফিস্কি এই সময়ে সিনিয়র প্রোফেসর পদে উত্তীর্ণ হন। এই পদে থাকতে গেলে, এডিনোসিন ট্রাইফসফেট (এটিপি) ও ফসফোক্রিয়েটিন এর গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাগুলি শুধুই তাঁর নামে থাকার দরকার ছিল। সুব্বারাও তাঁকে সাহায্যের জন্যে তাঁর নিজের হাতে করা সমস্ত কাজ ফিস্কিকে দিয়ে দেন। এ এক ভয়ঙ্কর আত্মত্যাগ! পৃথিবীতে খুব কম মানুষ নিঃস্বার্থ ভাবে এই কাজ করতে পারেন। তবে এর ফলে সমস্ত প্রোজেক্ট থেকে সুব্বারাও এর নাম মুছে যায়। এমনকি, তাঁর করা অপ্রকাশিত বহু মূল্যবান গবেষণা অধ্যাপক ফিস্কি কোনোদিনই প্রকাশ করেননি। সেই সব কাজ চিরতরে হারিয়ে যায়। গভীর ভাবে মর্মাহত হলেন সুব্বারাও। মৌলিক গবেষণার কাজকেই তিনি তাঁর ধ্যান-জ্ঞান মনে করতেন। সেই সময়ে তাঁর দরকার ছিল নিজের গবেষণাগার ও ছাত্রদল। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন হাভার্ড স্কুল অফ ট্রপিকাল মেডিসিন ছেড়ে দেবার। এরপর গবেষণা বিভাগের প্রধান হিসাবে সুব্বারাও যোগ দিলেন বিখ্যাত লেডারলে ল্যাবরেটরিতে (বর্তমানে Pifzer company-এর অধীন)। এখানে সুব্বারাও স্বাধীনভাবে তাঁর নিজস্ব গবেষকদল নিয়ে কাজ করার সুযোগ পেলেন। এই সময়ে তাঁর যুগান্তকারী আবিষ্কারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ভিটামিন বি-৯ বা ফোলিক অ্যাসিডের সংশ্লেষ পদ্ধতি এবং পৃথিবীর প্রথম ক্যানসার কেমোথেরাপির এর ওষুধ "মিথোট্রেক্সেট" এর উদ্ভাবন। এই অসামান্য কাজের জন্যে তাঁকে "কেমোথেরাপির জনক" বলে অভিহিত করা হয়। এছাড়া ফাইলেরিয়াসিস রোগের কার্যকরী ওষুধ "হেট্রেজান" সুব্বারাও-এর সময়কালীন আবিষ্কার। তাঁরই তত্ত্বাবধানে গবেষকদল বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অ্যান্টিবায়োটিক ওরিওমাইসিন (পৃথিবীর প্রথম টেট্রাসাইক্লিন অ্যান্টিবায়োটিক) আবিষ্কার করেন। পেনিসিলিন এর পরে ওরিওমাইসিনই হল চিকিৎসাবিজ্ঞানে সর্বাধিক ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক। ওই সময়ে টিউবারকুলোসিস বা যক্ষ্মারোগের কোনো চিকিৎসা ছিল না। হাজার হাজার মানুষের ওই রোগে মৃত্যু হত। বিজ্ঞানী সুব্বারাও অক্লান্ত পরিশ্রম করে তৈরি করলেন এক নতুন ওষুধ - "আইসোনিকোটিনিক অ্যাসিড হাইড্রাজিড", যা টিউবারকুলোসিস রোগনিরাময়ে অত্যন্ত কার্যকরী বলে গণ্য করা হয়।
কিন্তু ভাগ্যবিড়ম্বিত তাঁর জীবন! তাঁর অত্যন্ত প্রিয় দুই দাদা ট্রপিকাল স্ক্রু রোগে অকালে মারা যান। পরবর্তীকালে সুব্বারাও এর ফোলিক অ্যাসিড এর আবিষ্কার ওই মারণ রোগের ওষুধ হিসাবে ব্যাবহৃত হয়। স্মৃতিচারণায় সুব্বারাও দাদাদের অকালমৃত্যুর কথা বারবার বলতেন। সুব্বারাও কার্যক্ষেত্রে প্রায়শই অসহযোগিতা ও হিংসার শিকার হয়েছেন। যে মানুষটির সারাজীবনের অসামান্য বিজ্ঞান গবেষণার জন্যে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্য ছিল, তিনি রয়ে গেলেন বিস্মৃতির অন্ধকারে। আসলে, তিনি মনে করতেন বৃহৎ ও মূল্যবান আবিষ্কার একা কারোর হাত দিয়ে আসে না। বহু মানুষের কঠোর পরিশ্রম ও আত্মত্যাগের ফল হোল এই সব বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার। তাই তাঁর গবেষণায় তিনি সবাইকে কৃতিত্ব দিতেন। নিজে থাকতেন সবার শেষে।
শুনলে আশ্চর্য হতে হয়, আমেরিকায় দীর্ঘ ২২ বছর গবেষণা করা সত্ত্বেও তাঁর নাগরিকত্ব জোটেনি! জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি নিজেকে ‘ভারতীয় বিজ্ঞানী’ হিসাবে পরিচয় দিতে গর্ব বোধ করতেন। তাঁর ও শেষাগিরির একটি পুত্র সন্তান হয়েছিল। দুর্ভাগ্যের কথা, শিশুপুত্রটি মাত্র নয় মাস বয়সে এক দুরারোগ্য রোগে মারা যায়। শেষাগিরির কাছে ব্যক্তিগত চিঠিতে প্রায়শই ভারতে ফিরে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করতেন। কিন্তু কোনোদিনই তিনি আর শেষাগিরির কাছে ফিরে আসতে পারেননি। সুব্বারাও ল্যাবরেটরিতে কাজে ডুবে থাকতেন সারাদিন। অতিরিক্ত পরিশ্রমে তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি হয়। মাত্র ৫৩ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এই নম্র, প্রচারবিমুখ, মহান বিজ্ঞানীর মৃত্যু হয়। এই বিস্মৃতপ্রায়, বরেণ্য বৈজ্ঞানিকের প্রতি আমাদের অন্তরের সশ্রদ্ধ প্রণাম।
তথ্যসূত্রঃ
1. Dashatwar P. Dr. Yellapragada Subbarow (1895-1948). J Assoc Physicians India. 2015;63(3):114-115.
2. Bharti AH, Marfatia YS. Yellapragada SubbaRow - The unsung Indian biochemist behind methotrexate and other drugs. Indian J Dermatol Venereol Leprol. 2017;83(6):733-735. doi:10.4103/ijdvl.IJDVL_1018_16
3. Gupta SP, Bansal S, Ramesh V. Remembering Yellapragada SubbaRow. Int J Dermatol. 2013;52(7):882-886. doi:10.1111/ijd.12075
4. Gupta SP. An Indian scientist in America: the story of Dr. Yellapragada Subba Row. Bull Indian Inst Hist Med Hyderabad. 1976;6(2):128-143.
5. Fruton JS. In Quest of Panacea. Successes and Failures of Yellapragada SubbaRow. S. P. K. Gupta with Edgar L. Milford. Evelyn, New Delhi, India, 1987 (available from Preethi Kiran, 260 Avon Road, Devon, PA). 311 pp. $15. Science. 1988;240(4855):1066-1067. doi:10.1126/science.240.4855.1066
6. Mukherjee, Siddhartha (2010). The Emperor of All Maladies: A Biography of Cancer. Simon and Schuster. p. 31. ISBN 978-1-4391-0795-9.
7. Farber, S; Cutler, EC; Hawkins, JW; Harrison, JH; Peirce Ec, 2nd; Lenz, GG (1947). "The Action of Pteroylglutamic Conjugates on Man". Science. 106 (2764): 619–21.
8. Miller, DR (2006). "A tribute to Sidney Farber-- the father of modern chemotherapy". British Journal of Haematology. 134 (1): 20–6.
Powered by Froala Editor