অবশেষে অপেক্ষার অবসান। আজ ভোররাতেই ঘোষণা হল ৫২তম বুকার পুরস্কার ২০২০-র বিজয়ীর নাম। শেষ হাসি হাসলেন স্কটিশ লেখক ডগলাস স্টুয়ার্ট। বিশ্বসাহিত্যের প্রাঙ্গণে নিজের লেখা প্রথম উপন্যাসেই রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। এবার ‘শুগি বেন’-কেই সেরা হিসাবে বেছে নিলেন বুকার পুরস্কার কমিটির বিচারকরা।
আশির দশকে ডগলাস স্টুয়ার্টের বেড়ে ওঠা গ্লাসগো শহরে। সব থেকে কাছে মানুষ ছিলেন তাঁর মা। তবে মায়ের মাদকাসক্তি বেড়েই চলেছিল দিনের পর দিন। বার বার বুঝিয়েও লাভ হয়নি কোনো। ভেতর ভেতর নিশ্চুপেই ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল অ্যালকোহল। তখন বয়স মাত্র ১৬ বছর, মাতৃবিচ্ছেদের যন্ত্রনাকে অনুভব করেছিলেন স্টুয়ার্ট। অকালে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়া মাকেই নিজের লেখা প্রথম উপন্যাস উৎসর্গ করেছেন এই স্কটিশ লেখক।
‘শুগি বেন’-এর গল্পেও আসলে বার বার ফিরে এসেছে তাঁর বেড়ে ওঠা আর নিজের জীবনের সেই অমোঘ স্মৃতিগুলোই। মিশে গেছে মায়ের মৃত্যুসংবাদ, যন্ত্রণা, মানুষের জীবন, মূল্যবোধ, সামাজিক বেড়াজাল, উত্থান-পতনের কথা। গড়ে উঠেছে নিঃস্বার্থ ভালোবাসার এক হৃদয়-বিদারক আখ্যান। যেখানে মদ্যপানে আসক্ত মহিলাকে ক্রমাগত স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য লড়াই করে যাচ্ছে তাঁর কনিষ্ঠ সন্তান।
তবে ৪৪ বছর বয়সী স্টুয়ার্ট পেশাগতভাবে একজন ডিজাইনার। রয়্যাল আর্ট কলেজ থেকে স্নাতক করার পরই তিনি পাড়ি দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। ২৪ বছর বয়স থেকেই ঠিকানা নিউইয়র্ক শহর। কারণ মায়ের মৃত্যুর সঙ্গে মানসিকভাবে শেষ হয়ে গিয়েছিল গ্লাসগো’র সঙ্গে তাঁর সম্পর্কও। গত দুই দশকে স্টুয়ার্ট কাজ করেছেন কেলভিন ক্লেইন, বানানা রিপাবলিক, জ্যাক স্পেড প্রভৃতি বহুজাতিক সংস্থায়।
তবে ছোটো থেকেই যে সাহিত্যচর্চার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল তাঁর, এমনটা একেবারেই নয়। বছর দশেক আগে ডগলাস স্টুয়ার্টের আত্মপ্রকাশ লেখালিখির জগতে। অবসর সময় আর কাজের মানসিক চাপ কাটাতেই কলম তুলে নিয়েছিলেন তিনি। তবে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি সেই রাস্তাতেও। বেশ কয়েকটি ছোটো গল্প পরপর প্রকাশিত হয়েছিল ‘লিটহাব’ এবং ‘দ্য নিউ ইয়র্ক’-এ। শুরু থেকেই যথেষ্ট প্রশংসা এবং জনপ্রিয়তা কুড়িয়েছিলেন তিনি। তারপর হাত দেওয়া প্রথম উপন্যাসে। নিজের জীবনের গল্প, ট্র্যাজেডিকেই ছড়িয়ে দেওয়া অক্ষরের সমন্বয়ে।
পুরস্কার ঘোষণার পর ডগলাস স্টুয়ার্ট জানান, তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাস লেখাও শেষ হয়ে গেছে। সেই গল্পের পটভূমিও গ্লাসগো শহরই। তা যে কিছুদিনের মধ্যেই হাতে এসে পৌঁছাতে পারে পাঠকদের, সে ব্যাপারেই ইঙ্গিত দিয়েছেন স্টুয়ার্ট। দ্বিতীয় উপন্যাসেও কি খুঁজে পাওয়া যাবে তাঁর ছোটোবেলার চড়াই-উৎরাই জীবনের গল্প? এই প্রশ্ন ঘিরে ইতিমধ্যেই জল্পনা শুরু হয়ে গেছে পাঠকমহলে।
১৯৬৯ সাল থেকে প্রদান করে আসা হচ্ছে বুকার প্রাইজ। বিশ্বব্যাপী ইংরাজি সাহিত্যের অন্যতম পুরস্কার হিসাবেই বিবেচনা করা হয় বুকারকে। আইরিশ মারডোচ থেকে শুরু করে সলমান রুশদি, ইশিগুরো, হিলারি মন্টেল প্রমুখ বিখ্যাত কথাকার সম্মানিত হয়েছেন বুকার পুরস্কারে। সেই তালিকাতেই নবতম সংযোজন হল স্টুয়ার্ট ডগলাসের নাম।
চলতি বছরে বুকার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন ছয় লেখক। তার মধ্যে ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভুত সাহিত্যিক অবনী দোশীও। এদিন স্টুয়ার্ট ডগলাসকে বিজয়ী ঘোষণার পর তাঁর হাতে স্মারক তুলে দেন প্রধান বিচারক মার্গারেট বাসবি। প্রদান করা হয় ৫০ হাজার ইউরোর অর্থমূল্যও। বারাক ওবামা, মার্গারেট অ্যাটউড, সলমান রুশদি-সহ বিখ্যাত তারকারা শুভেচ্ছা পাঠান স্টুয়ার্টের উদ্দেশ্যে...
Powered by Froala Editor