বেশিদিন আগের কথা নয়। শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড় থেকে হাঁটতে শুরু করেছে ছেলেটি। দিকভ্রান্তের মতো। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ পেয়ে গেল একটি ডবল-ডেকার। উঠে পড়ল তাতেই। আসলে কোথাও যাওয়ার নেই। শুধু বাসের দোতলার সামনের সিটে বসে একটু বাতাস গায়ে মাখা। এমনই ছিল নস্টালজিয়া। গ্রাম-মফঃস্বল থেকে একদিনের জন্য কলকাতায় কোন কাজে বা ঘুরতে এলেও, ডবল-ডেকার বাসে যে একবার চড়তেই হবে। তবে শুধুই নস্টালজিয়া নয়, কলকাতার ট্রাফিকের অনেকটাই এই বাসের উপর নির্ভর করে থাকত। এত বেশি যাত্রী পরিবহনের ক্ষমতা অন্য কোনো যানবাহনেরই ছিল না। সেই ১৯২৬ সাল নাগাদ কলকাতার রাস্তায় নেমেছিল এই বাস। তবে নব্বইয়ের দশক থেকেই এর চলাচল কমতে থাকে। ব্যস্ত ট্রাফিক আর রাস্তার ধারের গাছপালাকেই দায়ী করা হয় সেজন্য। ২০০৫ সালে শেষবার রাস্তায় দেখা গিয়েছিল ডবল-ডেকার। তবে বেশ কিছুদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল, আবার ফিরছে দোতলা বাস। এই বসন্তেই শেষ হতে চলেছে অপেক্ষা।
আরও পড়ুন
১৫ বছর পর আবারও কলকাতার রাস্তায় দোতলা বাস, অপেক্ষায় শহরবাসী
আবার কলকাতায় এসে পৌঁছল দোতলা বাস। তবে আগের চেয়ে অনেক বিষয়েই আলাদা। প্রথমত, তার পরিচিত লাল রঙ বদলে হয়েছে নীল-সাদা। সঙ্গে বদল হয়েছে চেহারাতেও। নতুন এই বাস কিন্তু হুড-খোলা। লন্ডনের রাস্তায় এতোদিন দেখা যেত হুড-খোলা দোতলা বাস। অবশ্য কলকাতার রাস্তার উপযোগী করে তুলতে গবেষণাও চলেছে বিস্তর। সন্দেহ ছিল কেন্দ্র সড়ক পরিবহন সংস্থার সবুজ সংকেত মিলবে কিনা, তাই নিয়েও। তবে আপাতত পরীক্ষামূলক অনুমতি মিলেছে। আর জামশেদপুরের কারখানা থেকে এসেও গিয়েছে এই হুড-খোলা দোতলা বাস। তবে যাত্রীদের জন্য এখনই পরিষেবা চালু হচ্ছে না। আপাতত পর্যটনের উদ্দেশ্যেই ব্যবহার করা হবে বলেই পরিবহন সংস্থার সূত্রে খবর।
আরও পড়ুন
ফরাসি কোম্পানির গাড়ি থেকে হলুদ অ্যাম্বাসেডর – ১১১ বছর পেরিয়েও উজ্জ্বল কলকাতার ট্যাক্সি
নতুন এই বাসকে ঘিরে কলকাতাবাসীর উৎসাহ তুঙ্গে। পুরনো ঐতিহ্যের সঙ্গে থাকছে অত্যাধুনিক পরিষেবা। আসন-সংখ্যা আগের থেকে অনেকটাই কম। মাত্র ৪৬টি আসনযুক্ত এই বাসে থাকছে নজরদারি ক্যামেরা এবং প্যানিক বাটনও। আর সেইসঙ্গে কলকাতার রাস্তায় খোদ ‘বিলেতি’ বাসের উত্তেজনা তো রয়েছেই। কলকাতা কি এভাবেই লণ্ডন হয়ে উঠবে? কলকাতাবাসী কিন্তু দোতলা বাসকে তার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য মনে করেই আপন করে নিচ্ছে।