ক্যালেন্ডারের পাতা উলটে ২০২১ সাল বিদায় নিয়েছে বেশ কিছুদিন হল। ভালোয় মন্দয় আরও একটা বছর কেটে গিয়েছে। কিন্তু সব মিলিয়ে কেমন কাটল বছরটা? পাল্লাটা ভালোর দিকে বেশি, নাকি খারাপের দিকে? ব্যক্তিগত অনুভূতিকে দূরে সরিয়ে রেখে এবার সমগ্র মানবজাতির পক্ষে বছরটা কেমন গেল, তারই হদিশ দিল ডুমসডে ক্লক। প্রতি বছরের মতো এবছরও এই ডুমসডে ক্লক (Doomsday Clock) রিপোর্ট প্রকাশ করা হল বুলেটিন অফ অ্যাটোমিক সায়েন্টিস্টের পক্ষ থেকে। আর বিজ্ঞানীদের হিসাব বলছে, মানবসভ্যতা ধ্বংসের থেকে ঠিক ১০০ সেকেন্ড দূরে রয়েছে।
শুধু চলতি বছরই নয়, বিগত ২ বছরের রিপোর্টেও বিজ্ঞানীরা লিখেছেন সভ্যতা ধ্বংসের থেকে ঠিক ১০০ সেকেন্ড দূরে। অবশ্য এই ১০০ সেকেন্ডের হিসাবটা একেবারেই প্রতীকী। মানবসভ্যতার শুরুর সময়কে ধরা হয়েছে ধ্বংস থেকে ১ মিনিট দূরে। সেই হিসাবে সামগ্রিক বিচারে প্রাকৃতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অন্যান্য বিষয়গুলির হিসাবে সভ্যতা কোথায় দাঁড়িয়ে রয়েছে, সেটাই হিসাব করেন বিজ্ঞানীরা। আপাতভাবে মনে হতে পারে, পরপর ৩ বছর একই ফলাফল আসাটা কিছুটা আশাপ্রদ। অন্তত সভ্যতা নতুন করে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে না। তবে এটাও মাথায় রাখতে হবে, সৃষ্টির শুরু থেকে এখনই সভ্যতা ধ্বংসের সবচেয়ে কাছে উপস্থিত হয়েছে। অন্তত তেমনটাই জানাচ্ছে ডুমসডে ক্লক।
১৯৪৫ সালে শেষ হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। সেইসঙ্গে হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে ভয়ঙ্কর পারমাণবিক বিস্ফোরণের সাক্ষী ছিল গোটা পৃথিবী। এই পারমানবিক বোমা তৈরি করেছিলেন ম্যানহাটন প্রোজেক্টের বিজ্ঞানীরা। অবশ্য তাঁদের অনেকেই শেষ মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যানকে নিরস্ত করতে চেয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অ্যালবার্ট আইনস্টাইন এবং রবার্ট ওপনহেইমার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চূড়ান্ত পরিণতিতে নিজেদেরও দায়ী মনে করেছিলেন তাঁরা। সেইসঙ্গে ঠিক করেছিলেন, মানুষকে বারবার সতর্ক করে যাওয়াও বিজ্ঞানীদের কর্তব্য। তাঁদের নেতৃত্বেই ১৯৪৭ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় ডুমসডে ক্লকের বুলেটিন। সেই থেকে প্রতি বছর এই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়ে আসছে।
বিজ্ঞানীদের মতে, ২০২১ সালে বেশ কিছু আশাপ্রদ ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কার। এছাড়াও কপ-২৬ সম্মেলন পরিবেশ সমস্যায় কিছুটা আশার ইঙ্গিত দিয়েছে। তবে আশঙ্কার কারণও বিশেষ কম নয়। সারা পৃথিবীতে নতুন করে সামরিক প্রস্তুতি বেড়েছে। আফগানিস্তান, সিঙ্গাপুরের মতো দেশে গণতন্ত্র সম্পূর্ণ ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। তাছাড়া আমাজন সহ পৃথিবীর সমস্ত বৃষ্টি অরণ্যের পরিমাণ কমেছে আশঙ্কাজনক পরিমাণে। মেরুপ্রদেশে বরফ গলছে। আর এই সবকিছু মিলিয়ে বিগত ২ বছরের চেয়ে বিশেষ উন্নতি বা অবনতি কিছুই ঘটেনি। আর এই পরিস্থিতি যদি স্থায়ী হয়, তাহলে যে মানবসভ্যতাকে বাঁচানোর কোনো রাস্তাই থাকবে না, সে-কথাও মনে করিয়ে দিলেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের মতে, একমাত্র বিজ্ঞানই পারে এই সমস্যার সমাধান ঘটাতে। আর তার জন্য সবার আগে প্রয়োজন সামরিক যুদ্ধের খরচ কমিয়ে তা মানুষের কল্যাণকামী গবেষণায় খরচ করা। পাশাপাশি পৃথিবীর প্রতিটা দেশের মধ্যে মৈত্রীভাব গড়ে তোলাও বিশেষ প্রয়োজন।
আরও পড়ুন
ঘনিয়ে আসছে মহাবিপর্যয়, বাঙ্কারে আশ্রয় খুঁজছেন বিলিয়নেয়াররা
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
ধ্বংসের মুখে আন্টার্কটিকার দুই বৃহৎ হিমবাহ; ঘনিয়ে আসছে মহাপ্রলয়?