করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ভয়ে অস্ট্রেলিয়াতেও দীর্ঘদিন ধরে চলেছে লকডাউন। এবার ক্রমশ তার নিয়ম শিথিল হয়ে আসছে। এমন সময়ে অনেকেই একটু বাড়ির বাইরে ঘুরে আসার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। আর গন্তব্য যদি হয় কুলুলা উপকূলের বার্নাক্লেস ক্যাফে, তাহলে মন্দ হয় না। সমুদ্রের ধারে সময় কাটানোর সঙ্গে আছে একদল ডলফিনকে খাবার খাওয়ানো এবং তাদের সঙ্গে খেলা করার সুযোগ। তাছাড়া, এখন দর্শকদের জন্য কিছু বাড়তি উপহার নিয়ে হাজির এই উপকূলের ডলফিন। যেন বহুদিন পর দেখা হওয়ায় সে মানুষকে বলতে চাইছে, 'এতদিন কোথায় ছিলেন?' তাই আগন্তুকের প্রতি তার এই সামান্য প্রীতি উপহার।
লকডাউনের নিঃসঙ্গ জীবন মানুষের বেশ কষ্টে কেটেছে। কারোর সঙ্গে দেখা নেই, সুখ দুঃখের বিনিময় নেই। আর মানুষের জীবনের সঙ্গেই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল যে ডলফিনরা? একা লাগে, তাদেরও একা লাগে। ২৯ বছর বয়সী এক ডলফিন, তার নাম মিস্টিক। সেই ১৯৯১ সাল থেকেই সে উপকূলে বেড়াতে আসা মানুষের সঙ্গে অভ্যস্ত। তারা ক্যাফে থেকে টিনভর্তি মাছ তুলে দেয় এই ডলফিনের মুখে। আবার কেউ কেউ ডলফিনের সঙ্গে লুটোপুটি খেলা করে উপকূলের বালিতে। অথচ দীর্ঘ লকডাউনের জেরে মানুষের মতোই একা হয়ে পড়েছিল মিস্টিকও। কিন্তু তারপর সে যা করল, তাতে রীতিমতো অবাক বিশেষজ্ঞরা।
লকডাউনের কড়াকড়ি শিথিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু মানুষ আবার যেতে শুরু করেন এই উপকূলে। সংখ্যা যদিও আগের থেকে অনেক কম। তবে এই দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর বন্ধুদের সঙ্গে খালি হাতে দেখা করতে আসেনি মিস্টিক। কারোর জন্য সে সমুদ্রগর্ভ থেকে তুলে এনেছে প্রবাল, কারোর জন্য ঝিনুক। তবে শর্ত একটাই। অন্তত একটি মাছ তাকে দিলে তবেই সে এই উপহার তুলে দেবে। এই ঘটনার কথা শুনে রীতিমতো বিস্মিত হয়েছেন ডলফিন বিশেষজ্ঞরা। বেরি ম্যাক-গভার্ন অবশ্য মন্তব্য করেছেন, ডলফিনের চরিত্র সম্বন্ধে অবাক হওয়ার নতুন করে কিছু নেই। তার সামাজিক জীবনের সঙ্গে মানুষের অদ্ভুত সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। এই ঘটনাও তেমনই একটি ইঙ্গিত দেয়। অবশ্য অনেকের মতে, নিছক খাবারের জন্যই ডলফিনটি এমন ব্যবহার করছে। তবে সমুদ্রের বুক থেকে যে প্রবাল বা ঝিনুক সংগ্রহ করে আনতে পারে, তার পক্ষে খাবার সংগ্রহ করা কঠিন নয়। অতএব এই ব্যবহার সামান্য বিনিময়ের সম্পর্ক নয়। তার থেকে অনেক বেশি মানবিক।
মিস্টিকের এই ব্যবহার প্রথম লক্ষ্য করেন কুলুলা উপকূলের স্বেচ্ছাসেবী লি ম্যাক-ফারসন। তারপর অনেক দর্শকই এই ঘটনা দেখেছেন। ঘটনার বিবরণ দিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেখা যায় বার্নাক্লেস ক্যাফে থেকে। আর এই পোস্টের দৌলতে সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবী জুড়ে। অস্ট্রেলিয়ার উপকূলের ঐশ্বর্য পর্যটকদের আকর্ষণ করে সবসময়। তবে তার প্রবাল, ঝিনুক বা অ্যাম্বারের সম্ভারের থেকেও হয়তো অনেক দামি এই মানবিক সম্পর্ক। মানুষকে ভয় পায় এমন অনেক প্রাণীর কথাই তো আমরা জানি। কিন্তু তার সঙ্গে অন্য প্রজাতির এই নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠেছে একেবারেই অজান্তে।