পরিসংখ্যান বলছে, দেশের মানুষের গড় বার্ষিক আয় ১.৩২ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ, লাখ খানেক টাকার সঞ্চয় করতে গেলেও বেশিরভাগ মানুষের কালঘাম ছুটে যায়। সেখানে দাঁড়িয়ে প্রতিদিন মধ্যাহ্নে মাংস-ভাত একপ্রকার বাতুলতাই বটে। তবে এমনই রাজকীয়তার সঙ্গেই দিন কাটায় গুজরাটের কুশকাল গ্রামের অর্জুন, কারমা, রাজা, লালসারা।
না, এরা কেউ-ই মানুষ নয়। সকলেই চতুষ্পদ। তবে তাদের সম্পত্তির কথা শুনলে রীতিমতো চমকে উঠবে যে কেউ। নয় নয় করে হলেও, অন্তত ৫ কোটির সম্পত্তি রয়েছে গুজরাটের বানাসকাঁথা জেলার পালানপুর তালুকের এই গ্রামের প্রতিটি কুকুরের। ভাবছেন, মালিকের সম্পত্তিতেই তবে হয়তো রাজা এইসকল সারমেয়রা? না, ল্যাবরেডর, হাসকি কিংবা জার্মান শেফার্ডের মতো দামি ব্রিড নয়, এরা সকলেই পথের কুকুর (Stray Dogs)। তাহলে? কিছুতেই হিসেব মিলছে না নিশ্চয়ই? বিষয়টা খুলে বলা যাক তবে।
এই গল্পের শুরু খুঁজতে গেলে পিছিয়ে যেতে হবে শতাধিক বছর। পালানপুরে তখন নবাব-শাসন চলছে। অর্থ কিংবা খাবারের অনটনে যাতে গ্রামবাসীদের ভুগতে না হয়, তাই তাঁদের বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি দান করেছিলেন তৎকালীন নবাব। গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দা আজও জীবিকা নির্বাহ করেন সেই-জমিতে চাষ করেই। কিন্তু যাদের ফসল উৎপাদনের ক্ষমতা নেই, তারা? অর্থাৎ, পথসারমেয়রা?
তাদের জন্য এগিয়ে আসেন গ্রামবাসীরাই। তাঁরা মিলিতভাবেই সিদ্ধান্ত নেন, গ্রামের প্রতিটি কুকুরের জন্য বরাদ্দ করা হবে ২০ বিঘা জমি। অবশ্য লিখিতভাবে জমির মালিকানা কুকুর নয়, স্থানীয় কৃষকদেরই। সেখানে চাষাবাদ কিংবা ফসল উৎপন্ন করবেন তাঁরাই। তবে সেই আয় বরাদ্দ থাকবে কুকুরদের জন্য। প্রজন্মের পর প্রজন্ম পেরিয়ে আজও বজায় রয়েছে সেই নীতি। গ্রামবাসীদের সৌজন্যেই রীতিমতো রাজার হালে দিন কাটে সেখানকার কুকুরদের। শুধু এলাহি খাওয়া-দাওয়াই নয়, তাদের জন্য রয়েছে আলাদা থাকার ব্যবস্থা, বাসনপত্র ও অন্যান্য সরঞ্জাম। প্রতিদিন বিশেষভাবে হাঁড়ি চড়ে তাদের জন্য। চিকিৎসাতেও খামতি নেই এতটুকু। মূল্যবৃদ্ধি, মহামারী, ঝড়ঝঞ্ঝা কোনো কিছুই ব্যাহত করতে পারেনি এই ঐতিহ্যকে। বর্তমানে এই গ্রামে সবমিলিয়ে ৭০০ মানুষের বাস। অন্যদিকে কুকুরের সংখ্যা ১৫০। তবে তারাই যেন এই গ্রামের আসল রাজা…
Powered by Froala Editor