প্রতি বছর কালীপুজো, দীপাবলির সময় কী কী জিনিস একই দেখতে পাই? শব্দবাজি, আলোর রোশনাই, কালী মন্দিরগুলোতে উপচে পড়া ভিড়— এইগুলোই আমাদের মনে আসে আগে। এইগুলোর সঙ্গে আরও একটা জিনিস হয়। কুকুরের লেজে কালিপটকা বেঁধে ফাটানো। বারংবার সচেতনতা প্রচার করা সত্ত্বেও কোনওভাবে কমানো যায় না এইরকমের ঘটনা। নেপালে দীপাবলির সঙ্গেও কুকুর সম্পর্কিত। তফাত হল, কালিপটকা বাঁধার বদলে ওইদিন কুকুরদের পুজো করা হয়। হ্যাঁ, এটাই হল নেপালের বিখ্যাত কুকুর তিহার।
তবে এই তিহার জেল নয়, এটি সম্মান জানানোর উৎসব। কিন্তু কেনই বা হয় এটি? জানতে গেলে একটু মনোযোগ দেওয়া যাক মহাভারতের দিকে। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শেষ। ধৃতরাষ্ট্র, কুন্তী, গান্ধারী মারা গিয়েছেন। চলে গিয়েছেন কৃষ্ণও। দ্রৌপদী-সহ পঞ্চপাণ্ডব চলেছেন মহাপ্রস্থানের পথে। এই দীর্ঘ যাত্রায় তাঁদের সঙ্গে আরও একজন ছিলেন। একটি কুকুর। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত পাণ্ডবদের সঙ্গ দিয়েছিল কুকুরটি। যখন একে একে বাকিরা মারা যাচ্ছে, তখন যুধিষ্ঠিরের বন্ধু হিসেবে এই কুকুরই ছিল। শুধু মহাভারত বা পুরাণ নয়, একই চিত্র আমরা দেখতে পাই আমাদের চারিপাশেও। যা কিছু হয়ে যাক, পরম বন্ধু হয়ে শেষ পর্যন্ত থেকে যায় এই প্রাণীটি। এত বিশ্বস্ত, বন্ধুবৎসল, একটি প্রাণীর প্রতি আমাদের আচরণ কী থাকে? কখনও গায়ে গরম জল ঢেলে দেওয়া, কখনও ঢিল ছোঁড়া, দোলের সময় গায়ে বাদুরে রং মাখিয়ে দেওয়া— এসব তো আছেই। সেই সঙ্গে আছে দীপাবলির সময় কুকুরদের কানের পাশে শব্দবাজি ফাটানো, লেজে পটকা বেঁধে দেওয়া। ওই শব্দবাজির তাণ্ডবে আমরাই টিকতে পারি না। কুকুরদের শ্রবণক্ষমতা তো প্রখর, তাহলে তারা কী করে শান্তিতে থাকবে?
এত কিছু মাথায় নিয়ে, এই একটা দিন নেপালের অধিবাসীরা সম্মান জানান কুকুরদের। পুজো করেন। যে প্রাণীটি কোনও কিছুর পরোয়া না করে আমাদের সঙ্গে থাকে, তার কাজকেই শ্রদ্ধা জানানো হয়। পোষ্য হোক, বা রাস্তার কুকুর— প্রত্যেককে মালা পরিয়ে, সিঁদুরের তিলক লাগিয়ে সম্মান জানানো হয়। আস্তে আস্তে এই কুকুর তিহারের পরিধি বাড়ছে। নেপালের গণ্ডি ছাড়িয়ে এটি চলে গেছে মেক্সিকোতেও। আমরাও কি করতে পারি না এরকম? আমাদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধুকে একটু সঙ্গ দিতে পারি না?