পার্কের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন এক প্রৌঢ়া। সঙ্গে কিছু খাবারের প্যাকেট। হঠাৎ পার্কের ভিতর থেকে একটা কুকুর বেরিয়ে এল। মুখে কথা বলতে পারে না, তাই লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে যেন কিছু একটা বলতে চাইছে। প্রৌঢ়া যেন সেই অনুচ্চারিত কথাটা বুঝতে পারলেন। খাবারের প্যাকেট থেকে কিছুটা ধরলেন সেই কুকুরের মুখের সামনে। আর তারপরেই এক অবাক দৃশ্য, কুকুরের চোখে জমা হল বিন্দু বিন্দু বাষ্প। তারপর সেই বাষ্প অশ্রু হয়ে ঝড়ে পড়ল। ঠিক যেন কৃতজ্ঞতায় ভিজে এল তার চোখ। এর ঠিক কিছুদিন পর আবারও প্রৌঢ়াকে যেতে দেখে এগিয়ে আসে সেই কুকুরটি। আবারও সেই আগের দৃশ্যেরই পুনরাবৃত্তি।
মানুষের সবচেয়ে কাছের প্রাণী কুকুর। তার মধ্যে নানা মানবিক অনুভূতির প্রকাশ সত্যিই অবাক করে মাঝে মাঝে। আর এমন একটা দৃশ্যও ভাইরাল হয়ে উঠতে সময় নেয়নি। সামাজিক মাধ্যমের সৌজন্যে চিনের সাংহাই প্রদেশ থেকে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভিডিও। কিন্তু এর মধ্যেই সেই কুকুরটিকে আর খুঁজে পাচ্ছেন না সেই প্রৌঢ়া। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, কিছুদিন আগে কুকুরটিকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কুকুরটি ভয় পেয়ে গাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। হয়তো ভেবেছিল তাকে বন্দি করা হচ্ছে। আসলে এভাবে কুকুরদের বন্দি করার দৃষ্টান্তও তো নতুন নয়। কিন্তু এখন হঠাৎ সেই বন্ধুকে হারিয়ে ফেলে প্রৌঢ়ার মনে হতে থাকে, হয়তো তাকে জোর করে নিয়ে গেলেই ভালো হত।
মানুষের সঙ্গেই অরণ্য জীবন ছেড়ে এসেছিল কুকুর। কিন্তু সময়ের নিয়মে মানুষ তার সভ্যতাকে যেভাবে সাজিয়েছে, সেখানে কুকুরদের কোনো জায়গা নেই। কেউ কেউ ভালোবাসা নিয়ে এগিয়ে এলেও, সামগ্রিকভাবে তারা আজও অবহেলিত এবং অসহায়। মানুষের সামান্য মানবিক ব্যবহারও তাদের আবেগতাড়িত করে তোলে। আর বিচ্ছেদের যন্ত্রণাও একই রকম। হয়তো প্রৌঢ়া যেমনভাবে কুকুরটিকে খুঁজছেন, কুকুরটিও সেভাবে খুঁজছে প্রৌঢ়াকে। একদিন নিশ্চই আবার দুজন দুজনের সন্ধান পাবে, এটুকু আশা রাখাই যায়।
Powered by Froala Editor