হারিছেন ক্ষমতা। তবুও যেন নাছোড়বান্দা যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এখনও অবধি ট্রাম্প মানতে নারাজ, সঠিক পদ্ধতিতে সৎ-ভাবে হারানো হয়েছে তাঁকে। ভোটের গণনা চলাকালীন সময় থেকেই বারবার কারচুপির অভিযোগ এনেছিলেন প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের বিরুদ্ধে। মার্কিন প্রদেশের সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করে দেয় ট্রাম্পের সেই আবেদন। তবে নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পরেও অপরিবর্তিত রয়েছে সেই মানসিকতাই।
স্থানীয় সময় শুক্রবার রাতেই আরও একবার এই ধরণের দাবি করে ট্যুইট করেন ট্রাম্প। খানিকক্ষণের মধ্যেই হিংসামূলক সেই বক্তব্যকে তৎক্ষণাৎ সরিয়ে ফেলে ট্যুইটার কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বিষয় হল বাইডেনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কি সত্যিই কোনো ভিত্তি ছিল? অন্তত তেমনটা খুঁজে পাননি সুপ্রিম কোর্টের বিচারকরা। তবে বৃহস্পতিবার নির্বাচনে গণনার খেলা ঘুরে যাওয়ার অনেক আগে থেকেই বাইডেনের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছিল ট্রাম্পের এই মিথ্যা অভিযোগ শানানো। গত ২২ অক্টোবরের এক বিতর্কসভায় উপস্থিত ছিলেন দুই মহারথীই। আর সেখানেই একের পর এক ভুয়ো তথ্য বলে গিয়েছিলেন বাইডেনের নামে। সরকারি নথিতে অন্য তথ্য থাকলেও বড়াই করেছিলেন নিজের ক্ষমতার। দিয়েছিলেন ‘বাণিজ্য যুদ্ধে’ চিনকে মোকাবিলা করার ফাঁপা আশ্বাস।
কৃষ্ণাঙ্গদের বিরুদ্ধে অবস্থান, অভিবাসীদের প্রতি অসহিষ্ণু মনোভাব, অর্থনৈতিক মন্দা, মহিলা-নির্যাতন এবং জলবায়ুর পরিবর্তনকে অস্বীকার করা— এসব কারণ প্রথমেই উঠে আসার কথা। এসেওছে বহু বহু বার। কিন্তু এ ছাড়াও অনর্গল মিথ্যে কথা বলে যাওয়াও কি কাল হয়ে দাঁড়াল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে?
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটনপোস্ট এ-বিষয়েই নিয়েছিল এক অভিনব উদ্যোগ। রাষ্ট্রপতির বলা মিথ্যে কথা বা ভুয়ো আশ্বাসবাণীর একটি পরিসংখ্যান তৈরি করেছিল তারা। আর সেই তথ্য দেখলেই চমকে উঠবেন যে কেউ। জুলাই মাস অবধি নিজের শাসনকালে ১২৬৭ দিনে ২০ হাজার প্রকাশ্য মিথ্যে কথার সীমারেখা পেরিয়ে গেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যার মধ্যে রয়েছে করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের আশ্বাসও। ভোটের প্রচারে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছে রয়েছে এই মারণ রোগের ওষুধ। অথচ ট্রাম্পের প্রতিটি প্রচারেই হু-হু করে ছড়িয়েছে সংক্রমণ। যখন শেষ মুহূর্তেরও উপস্থাপনা করতে পারলেন না ভ্যাকসিনের, তখন দাবি করলেন তিনিই রুখে দিয়েছেন ২০ লক্ষের মৃত্যু! একজন ছোট্ট শিশুর কাছেও পরিষ্কার মিথ্যে এই তথ্য। একদিকে যেমন অসতর্কতা, অন্যদিকে এই মিথ্য প্রতিশ্রুতি কি এই ভরাডুবির জন্য যথেষ্ট নয় ট্রাম্পের?
অন্যদিকে, ট্রাম্পের এই মিথ্যেগুলোর নিরিখে সাধারণ মানুষকে উত্তপ্ত করে তুলতে অনুঘটকের কাজ করেছে লকডাউন। বলা যায়, ট্রাম্পের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন না বাইডেন। বরং তা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম। লকডাউনে যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ মানুষই ছিলেন বাড়িতে। আর সেই সুযোগটাকেই সম্পূর্ণরূপে কাজে লাগিয়েছিলেন বাইডেন। সরাসরি সভা কিংবা র্যােলির আয়োজন না করে জোর দিয়েছিলেন টেলিভিশন এবং অনলাইন প্রচারে। কিন্তু ট্রাম্প? টেলিভিশনে এলেন বটে, তবে সেই আশ্রয় নিলেন মিথ্যেরই। প্রতিশ্রুতির লোভ দেখিয়ে ভোট আদায়ের সেই তারিখাই ফিরে এল যেন বুমেরাং হয়ে। কফিনে পুঁতে দিল শেষ পেরেকটাও।
পাশাপাশি অধিক আত্মবিশ্বাসও তো পতনেরই একটা কারণ। ট্রাম্পের ক্ষেত্রে হলও তেমনটাই। সে ঘোর থেকে কি আদৌ এখনও বেরতে পেরেছেন ট্রাম্প? নিতে পেরেছেন মানসিক প্রস্তুতি? বরং এখনও বাচ্চা ছেলের মতোই গোঁয়ার্তুমি করে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্রাক্তন’ সর্বেসর্বা। এখনো আশা জিইয়ে রেখেছেন আরেকবার নির্ভুল এবং কারচুপিহীন গণনা হলেই হার মানবে প্রতিপক্ষ! শুধু হাস্যকরই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরলতম! নতুন প্রেসিডেন্টকে শুভেচ্ছা পাঠানোর রীতি রয়েছে দীর্ঘকাল ধরেই। তার ধারে কাছে না গিয়েও একতরফা এক বাক-যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প। যার অধিকাংশটাই মিথ্যাচার…
আরও পড়ুন
৫৮ বছর আগেও চিন-ভারত যুদ্ধে ভারতের ট্রাম্প কার্ড তিব্বতী সেনারা, পরিকল্পনায় এক বাঙালি
(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)
তথ্যসূত্র-
১. President Trump has made more than 20,000 false or misleading claims, Glenn Kessler, Washington Post
২. Trump is drowning in his own lies. Here are the latest signs of it, Greg Sargent, Washington Post
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
‘বিজ্ঞান কিছুই জানে না’, আবহাওয়া পরিবর্তনকে নস্যাৎ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের