বছরখানেক আগের ঘটনা। তখনও করোনা প্রতিষেধক তো দূরের কথা, চিকিৎসার কোনো গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিই ছিল না চিকিৎসকদের কাছে। এর মধ্যেই আয়ারল্যান্ডে শুরু হয়ে গিয়েছিল অতিমারীর দ্বিতীয় তরঙ্গ। চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে তখন চূড়ান্ত ব্যস্ততা। অথচ তার মধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছিল নতুন এক আয়োজন। প্রতিদিন না হলেও অন্তত সপ্তাহে একদিন বিকালে একসঙ্গে জড়ো হচ্ছিলেন ডাবলিন শহরের সেন্ট জেমস হাসপাতালের চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা (Health Workers)। আলাপ-আলোচনা চলছিল, তবে অতিমারী (Pandemic) সংক্রান্ত কোনো বিষয় নিয়ে নয়। বরং হাসপাতালের মধ্যেই গড়ে উঠেছিল একটি কবিতাপাঠের এবং কবিতাচর্চার আসর (Poetry)।
সম্প্রতি এই আসরের বর্ষপূর্তিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন উদ্যোক্তারা। সেখানে ডাঃ হ্যাটন শুনিয়েছেন পরিকল্পনার পিছনে থাকা ভাবনাচিন্তার কথা। আসলে শীতকাল পড়লেই হাসপাতালে রোগীর ভিড় বাড়তে থাকে। আর তার মধ্যে করোনা অতিমারী পুরো পরিস্থিতিটা আরও জটিল করে তুলেছিল। মানসিক চাপ বাড়ছিল স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে। আর তার প্রভাব পড়ছিল রোগীদের উপরেও। এইসময় হ্যাটন উপলব্ধি করেছিলেন, কবিতা পড়লেই তাঁর মনের চাপ অনেকটা কমে যাচ্ছে। আর সাহিত্যের বিরাট ভাণ্ডারে এমন কবিতার সংখ্যাও কম নয়, যা মানুষকে কঠিন সময়ে সঙ্গ দিতে পারবে। সেখান থেকেই এই উদ্যোগের কথা ভাবা। তবে শুধু প্রতিষ্ঠিত কবিদের কবিতাই নয়। চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজেরাও তাঁদের কবিতা শোনাতেন এই আসরে। আবার স্টিকি নোটসের উপর সেইসব কবিতা লিখে ঝুলিয়ে দিতেন হাসপাতালের দেয়ালে। যাতে রোগী এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদেরও মনোবল কিছুটা বৃদ্ধি পায়।
এরপর দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে একটা বছর। অতিমারীর ঢেউ কিছুটা শান্ত হয়েছে। তার মধ্যে প্রতিষেধকও এসে গিয়েছে। কিছুটা বাড়তি সময় হাতে পেয়ে দল বেঁধে মিউজিয়াম অফ লিটারেচার এবং মিউজিয়াম অফ মডার্ন আর্টেও ঘুরে এসেছেন সকলে। তাঁদের অনেকের মধ্যেই এর আগে কবিতা নিয়ে বিশেষ কোনো চর্চা ছিল না। এমনকি ডাঃ হ্যাটন নিজেও বলেন, এর আগে কখনও মন দিয়ে কবিতা পড়ার কথা ভাবেননি তিনি। বরং চিরকাল বিজ্ঞানের ছাত্র হিসাবে সাহিত্যকে কিছুটা অবজ্ঞাই করে এসেছেন। তবে অতিমারীর দাপটের মাঝে কবিতাই হয়ে উঠেছে তাঁদের আশ্রয়। আগামী জীবনটা সেই আশ্রয়েই কাটিয়ে দিতে চান সকলে। রোগী দেখা, তাঁদের সেবা-শুশ্রূষা তো রয়েছেই, কিন্তু এই কবিতার আসরকেও টিকিয়ে রাখতে বদ্ধপরিকর তাঁরা।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
‘মিথ্যে মহামারী’ তৈরি করে ৮ হাজার ইহুদির প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন পোলিশ চিকিৎসক