মহামারী হানা দেওয়ার পর সম্পূর্ণভাবে বদলে গেছে আমাদের দৈনন্দিনের জীবন। মারণ ভাইরাসের থেকে বাঁচতে গৃহবন্দি হয়েছে গোটা বিশ্ব। কিন্তু তাতেই কি নিরাপদ আমরা? দীর্ঘদিন গৃহবন্দি থাকার জন্য প্রকোপ বাড়ছে অন্যান্য নানান দুরারোগ্য রোগের। ক্যানসার বা টিউবারকিউলোসিসের মতো রোগের প্রতিকারের পরিকাঠামোও ধাক্কা খেয়েছে। এবার সাম্প্রতিক গবেষণা জানাল, দেশজুড়ে লাফিয়ে বাড়ছে রিকেটের (Rickets) প্রকোপ। আর তার পিছনেও অন্যতম কারণ হল লকডাউন (Lockdown)।
সম্প্রতি, রিকেটের ঘটনার ওপর একটি বিশেষ সমীক্ষা করেন মুম্বাইয়ের শিশু বিশেষজ্ঞরা। তাতে উঠে আসে, লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে রিকেটে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা। কিন্তু তার কারণ কী?
মূলত, শিশুদের মধ্যে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায় ভিটামিন ডি-র অভাবে। আর এই বিশেষ ভিটামিন সংশ্লেষের রাস্তাটাই বন্ধ করে দিয়েছে লকডাউন। গবেষকরা জানাচ্ছেন, মানবদেহে ভিটামিন ডি-র মূল উৎস হল সূর্যালোক। সূর্যালোক শোষণ করেই ৫০-৯০ শতাংশ ভিটামিনের চাহিদা মেটায় আমাদের ত্বক। দিনে অন্তত মিনিট কুড়ি সময় রোদে দাঁড়ালেও ৪০ শতাংশ ভিটামিন-ডি সংশ্লেষ হয় আমাদের শরীরে।
কিন্তু লকডাউনে স্কুলের বদলে অনলাইন ক্লাস চালু হয়ে যাওয়ার বাড়ি থেকে বেরনো বন্ধ হয়ে গেছে অধিকাংশ কিশোর-কিশোরীদের। সেইসঙ্গে কমেছে ঘরের বাইরে খেলাধুলোর পরিমাণও। আর এই রোদের সংস্পর্শে না আসাই রিকেটে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়িয়ে দিচ্ছে শিশুদের মধ্যে।
আরও পড়ুন
শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেই ‘সব্যসাচী’, লকডাউনে স্বপ্নপূরণ যুবকের
তবে শুধু শিশু নয়, লকডাউনে ভিটামিন ডি-র ঘাটতি প্রভাব ফেলছে প্রাপ্তবয়স্কদের জীবনেও। দেখা দিচ্ছে অস্থিক্ষয়, পেশিতে টান লাগা, বাতের মতো উপসর্গ। ক্রমশ দুর্বল এবং নমনীয় হচ্ছে দেহের হাড়। তাছাড়াও এক অঙ্গ থেকে অন্য অঙ্গে বার্তা পাঠাতে স্নায়ুকোষেরও ভিটামিন ডি প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে এই ভিটামিনের ঘাটতিই আলস্যেরও কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
আরও পড়ুন
প্রতিবন্ধীদের নিয়ে তৈরি ক্যাফে, ধুঁকছে লকডাউনের পরেও
এই সমস্যা শুধু ভারতের নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বের ১০০ কোটিরও বেশি মানুষ ভুগছেন ভিটামিন ডি-র অভাবজনিত রোগে। ভারতের ৫০ শতাংশের বেশি মানুষ রয়েছেন এই তালিকায়। কিন্তু প্রতিকার কী? গবেষকরা জানাচ্ছেন, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ও দুগ্ধজাত অন্যান্য খাবার খেলে অনেকটাই চাহিদা মিটবে ভিটামিন ডি-র। কিন্তু সেটাও স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটাই কম। একমাত্র ঘরের বাইরে স্বাভাবিক যাপনই ইতি টানতে পারে এই বৈশ্বিক সমস্যার। কিন্তু এই মহামারীর শেষ কোথায়, কবেই বা স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে পারবে মানব সভ্যতা— জানা নেই। ফলে, আগামী দিনে রিকেট ও অস্থি-সংক্রান্ত রোগের প্রাদুর্ভাব আরও বাড়বে, তা একপ্রকার নিশ্চিত…
আরও পড়ুন
লকডাউনে আত্মহত্যার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৬৭.৭ শতাংশ : আন্তর্জাতিক রিপোর্ট
Powered by Froala Editor